সিনিউজ ডেস্ক:‘সিডস ফর দ্য ফিউচার ২০২১ বাংলাদেশ’-এর ১৬ জন শীর্ষস্থান অধিকারকারীদের নাম ঘোষণা করেছে হুয়াওয়ে। আজ অনলাইনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এই বিজয়ীদের নাম জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালদুন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. ওমর জাহ্ এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝ্যাং ঝেংজুন। এছাড়াও, হুয়াওয়ে বাংলাদেশের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ বিশ্বব্যাপী এসটিইএম (সায়েন্স, টেকনোলোজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথ) শিক্ষার্থীদের জন্য হুয়াওয়ের বিশেষ একটি ফ্ল্যাগশিপ সিএসআর প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আইসিটি খাতের মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা হয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে চালু হওয়ার পর থেকেই এ প্রোগ্রামটি এই খাতের প্রতিভাবানদের মেধা বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে।
এবছর ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার ২০২১ বাংলাদেশ’-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট-এর পাশাপাশি প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেয় যেখানে ছিল ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি (ইডব্লিউ), আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি (এইউএসটি)। পাশাপাশি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি (আইইউটি)-এর মতো আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়।
বাছাই পর্বে এবছর এই আটটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬শ’ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবং তাঁদের অ্যাকাডেমিক রেকর্ড, তাৎক্ষণিক পরীক্ষা (স্পট এক্সাম), উপস্থাপন দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তার ভিত্তিতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন ছাত্র ও একজন ছাত্রীকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও একটি বিশেষ জুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল যা স্পট এক্সামের জন্য প্রশ্নপত্র তৈরি ও অংশগ্রহণকারীদের মূল্যায়নে কাজ করেছে।
নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা হলেন: বুয়েট থেকে ইমতিয়াজ আহমেদ ও সৈয়দা ফাতিমা ফায়রুজ; কুয়েট থেকে সুমাইয়া রহমান ও মেহেদী হাসান; রুয়েট থেকে নাহিয়ান রিফাত ও নাজিফা রহমান অধরা; চুয়েট থেকে অনিন্দ্য নন্দী ও ফাতেমা ইসলাম তানিয়া; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৈয়দ দোহা উদ্দিন ও নিশাত তাসনিম; ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে সীমামুন হাসিবা রেজা ও মোহতাসিম তাসনিম জামান; এইউএসটি থেকে কাজী আরহাম কবির ও সাদিয়া কারিশমা কবির; এবং আইইউটি থেকে এ কে এম রাকিব ও রামিশা রাইদা করিম।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “যেহেতু বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং ডিজিটাল রূপান্তর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করবে, তাই দক্ষ তরুণ গড়ে তোলা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। এই বিষয়ে, হুয়াওয়ের ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ উদ্যোগটি শুধু ভবিষ্যৎ পথ-প্রদর্শনই করবে না, দেশের জন্যও ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে।”
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ঝ্যাং ঝেংজুন বলেন, “আমরা সাত বছর আগে বাংলাদেশে এই কার্যক্রম শুরু করেছি এবং ইতোমধ্যে এটি দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। হুয়াওয়ে তরুণদের অঙ্কুর হিসেবে বিবেচনা করে, যাদের যথাযথ যত্ন নিলে ভবিষ্যতে তারা নিজেদের দেশের সম্পদ হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে। সে লক্ষ্যে, হুয়াওয়ে ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ প্রোগ্রামসহ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যাতে দেশের তরুণদের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলা যায়।”
বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালদুন বলেন, “আজকের তরুণরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। হুয়াওয়ে, সিডস ফর দ্য ফিউচার প্রোগ্রামের মাধ্যমে, বাংলাদেশের উদীয়মান আইসিটি প্রতিভা এবং ভবিষ্যতের আইসিটি লিডারদের জ্ঞানকে প্রসারিত করে এবং তাদের এমন দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে যা তাদের কর্মজীবনের পাশাপাশি দায়িত্বশীল বিশ্ব নাগরিক হিসেবে পরিণত হতে ভূমিকা রাখবে”।
বুয়েট-এর ভিসি অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, “এই প্রোগ্রামটি আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশে এবং বিশেষজ্ঞ ও হুয়াওয়ে প্রকৌশলীদের কাছ থেকে সরাসরি অনেক কিছু শেখার জন্য চমৎকার একটি সুযোগ। এমন উদ্যোগের জন্য হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ।”
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. ওমর জাহ্ বলেন, “ছাত্ররাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা দেশের অগ্রগতির চাকা সচল রাখবে। ইউনিভার্সিটি প্রতিনিধি হিসেবে যখন আমরা তরুণদের ভাল কোন কাজে জড়িত হতে দেখি তখন আমরা রোমাঞ্চিত এবং খুশি হই। সিডস ফর দ্য ফিউচার হলো ছাত্রছাত্রীদের একাডেমিক পরীক্ষায় আরও ভাল করার, উপস্থাপনা দক্ষতার বৃদ্ধির এবং তাদের উদ্ভাবনী মনকে প্রজ্বলিত করার জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম। ভবিষ্যতের আইসিটি প্রতিভা বিকাশের জন্য কাজ করার জন্য আমি হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ জানাই।”
এই প্রতিযোগিতার একজন বিজয়ী, রুয়েট-এর কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী নাজিফা রহমান বলেন, “এ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যপক পরিবর্তন এসেছে, আমি এখন নতুনভাবে পৃথিবীকে দেখছি। আগে আমার ভাবনায় অনেক আইডিয়া থাকলেও সেগুলো সঠিকভাবে গুছিয়ে তুলতে পারতাম না। ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ – এ অংশগ্রহণ করার পর থেকে আমি আমার বিক্ষিপ্ত আইডিয়াগুলোকে আরও গোছানো ও গঠনমূলক করে তোলার উপায় বের করতে শুরু করেছি।”
এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা সাধারণত শিক্ষা সফরে চীনে যায়; তবে, কোভিড-১৯ মহামারির ফলে এ প্রশিক্ষণটি একটি অনলাইন প্রোগ্রামে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বিজয়ীদের পুরস্কারের পাশাপাশি সনদপত্রও প্রদান করা হয়।
বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও দলগত ফটো সেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।