সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিজুয়াল কনটেন্ট-এর ব্যবহার

সিনিউজ ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়া ভিজুয়াল কনটেন্ট ব্যবহার করেছেন? মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি-র অংশ হিসেবে কি  যদি না করেন তাহলে ভুল করছেন। কারণ আপনার সাইটের ভিজিটরদের কাছে নিজের বার্তাকে সফলভাবে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে আপনার সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করছে কতটা কার্যকরভাবে আপনি সাইটে ভিজুয়াল কনটেন্ট তথা ছবিকে ব্যবহার করতে পারছেন তার ওপর।

কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিজুয়াল কনটেন্ট ব্যবহার কেন এত জরুরি? কারণ, আপনার অডিয়েন্স-এর কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়ার বাহক হিসেবে ছবি খুবই কার্যকর, এছাড়া আপনার কনটেন্ট পড়া, শেয়ার করা ও কমেন্ট করার ক্ষেত্রেও ছবি তথা ভিজুয়াল উপাদান তাদেরকে উৎসাহিত করবে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সোশ্যাল মিডিয়া পুরোপুরিভাবেই ভিজুয়াল সোশ্যাল মিডিয়ায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে। ফলে সমস্ত দ্বিধা ঝেড়ে আপনাকে এখন ভিজুয়াল কনটেন্ট নিয়ে সিরিয়াসভাবে চিন্তা করতে হবে।

কেন এটি জরুরি?
. ইন্টারনেটে আপনার ব্যবসা বা কাজকে প্রমোট করতে গেলে ছবির সাহায্য নিতেই হবে।
. ছবি কেবল কম জায়গাই দখল করে না, এটি আপনার অডিয়েন্সের মনের ওপর বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
. মানুষের মস্তিষ্ক যত দ্রæত টেক্সটকে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে, তার চাইতে বেশি দ্রæত ছবিকে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে তথা বুঝতে পারে।
.মানুষে মানুষে যত যোগাযোগ হয় তার শতকরা ৯৩% হয় নন-ভার্বাল, অর্থাৎ তাতে কথার কোনো ভূমিকা থাকে না। কাজেই বুঝতেই পারছেন, টেক্সট বা লেখার চাইতে ছবিই যোগাযোগের বড় মাধ্যম হতে পারে।
. ভিজুয়াল কেবল আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের মধ্যে আপনার দৃশ্যমানতা বা ভিজিবিলিটি বাড়ায় না, দেখামাত্র আপনার কনটেন্টকে চেনার ক্ষমতাও সৃষ্টি করে।

এখন তো আর সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ভিজুয়াল কনটেন্ট-এর গুরুত্ব নিয়ে আপনার মনে কোনো সন্দেহ নেই? এবার তাহলে আসুন, কীভাবে সুন্দরভাবে ভিজুয়াল কনটেন্ট ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে আরেকটু জানি।

. মানুষের মনে নাড়া দেয়ার জন্য ইমেজ ব্যবহার করুন: তথ্য প্রদান করার জন্য ইমেজ বা ছবিকে সবসময়ই খুবই শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, যেসব কনটেন্ট-এর সাথে ইমেজ বা ছবি আছে সেগুলোর তুলনায় যেগুলোর সাথে ইমেজ নেই সেগুলো মানুষ ৯৪% কম দেখে। ফলে বুঝতেই পারছেন, কেন আপনার সোশ্যাল মিডিয়া পরিকল্পনায় ছবিকে গুরুত্ব দিতেই হবে? তবে এজন্য আপনাকে এমন ছবি বেছে নিতে হবে যেটি আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে আপনার বিজনেস বা কমকাÐের ব্যান্ড ইমেজকে সবচেয়ে স্পস্টভাবে ফুটিয়ে তোলে। ছবি ব্যবহার করার আগে অনেক ভাবনা চিন্তা করতে হবে, বিশেষ করে আপনার কাজের বা ব্যবসার উদ্দেশ্যের সঙ্গে মানুষ কীভাবে এই ছবিকে সংযুক্ত করবে এবং এটি কীভাবে তাদের প্রণোদনা জোগাবে তা নিয়ে।

.ইমেজের সাথে ব্র্যান্ডেড কোটেশন বা টেক্সট ব্যবহার করুন: সাধারণ টেক্সট-এর চেয়ে ইমেজের যেহেতু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের বেশি ক্ষমতা আছে সেহেতু ছবিকে আরো আকর্ষণীয় করতে সেগুলোর সঙ্গে ক্যাপশন বা ব্র্যান্ডেড উদ্ধৃতি যুক্ত করুন। টেক্সচুয়াল ও ভিজুয়াল তথ্যের সুন্দর সম্মিলন আপনার ব্র্যান্ডকে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের আকর্ষণীয় বস্তুতে পরিণত করতে পারে। আপনার সাম্প্রতিক কোনো প্রজেন্টেশন, প্রিয় বই, নিবন্ধ বা বøগ পোস্ট থেকে নিতে পারেন এসব টেক্সট বা উদ্ধৃতি। তবে যেখান থেকেই নিন, এগুলো যেন আকর্ষণীয় ও মনোগ্রাহী হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সঙ্গে যাতে আকর্ষণীয় গ্রাফিক্স ও ফন্ট থাকে সেদিকেও লক্ষ রাখবেন।

.ইনফোগ্রাফিক্স, চার্ট ও গ্রাফ ব্যবহার করুন: আপনার কোন ক্ষেত্রে কাজ করেন তাতে কিছু যায় আসে না। আপনার কনটেন্ট-এর প্রামাণ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতাকে বৃদ্ধি করার জন্য ইনফোগ্রাফ বা চার্ট ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোর বেশির ভাগ ব্যবহারকারী কথার চেয়ে চবির সঙ্গে সহজে আত্মস্থ হতে পারে সেহেতু দৃষ্টি আকর্ষণকারী ছবির সঙ্গে যুক্ত করুন সঠিক, প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয় তথ্য।

আর এভাবেই তৈরি করুন মনোযোগ আকর্ষণকারী ইনফোগ্রাফ। তথ্যমূলক ও দৃষ্টি আকর্ষণকারী ইনফোগ্রাফ তৈরির জন্য ব্যাপকভাবে রিসার্চ করুন, প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলো সংগ্রহ করুন বিভিন্ন উৎস থেকে। ক্রেতাচাহিদা পূরণের জন্য আপনার ব্যবসার সাম্প্রতিক কৌশলগুলো কী তা ভাবুন। তারপর এমনভাবে চার্ট বা গ্রাফগুলো তৈরি করুন যাতে তা অডিয়েন্সের চাহিদা পূরণ করে, তাদের প্রশ্নগুলোর জবাব দেয়। নিচের ইনফোগ্রাফটি লক্ষ করুন। ফটোগ্রাফিতে ক্যামেরা নাকি স্মার্টফোন কোনটার চাহিদা বর্তমানে বেশি তা এই ইনফোগ্রাফ থেকে বোঝা যাচ্ছে।

 

.সৃষ্টিশীর ভিডিও ব্যবহার করুন: ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ভিডিও ব্যবহার নতুন কিছু নয়। তবে ভিডিওর উপকারিতা যে কতটুকু সেটি সম্বন্ধে অনেকেরই এখনও স্পষ্ট ধারণা নেই। আকর্ষণীয় ও তথ্যমূলক ভিডিওর ব্যবহার আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের গুরুত্বকে এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে আপনার সাইটকে ট্রাফিক নিয়ে আসতে একটি সুনির্মিত ভিডিওর বিকল্প নেই। আপনার তৈরি করা ভিডিওতে বিনোদন, তথ্য ও আকর্ষণীয়তার সুষম সমন্বয় ঘটাতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ভিডিওর ব্যবহার যেমন-তেমন না হয়ে সুচিন্তিত হতে হবে। মনে রাখতে হবে:

– ভিডিওর সাহায্যে আপনার পণ্য বা সেবার ব্যাপারে ভোক্তাদের সচেতনতা ৭৪ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।
– অনলাইনে মানুষ যত কাজ করে তার তিন ভাগের এক ভাগ ব্যয় হয় ভিডিওর পেছনে।
– প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০ কোটি মানুষ ভিডিও দেখে।
– কোনো কোম্পানির ওঢেব সাইটের ৭৫ ভাগের মত ভিউয়ার আসে ভিডিওর টানে।

অতএব বুঝতেই পারছেন, ভিডিওর কার্যকর ব্যবহার আপনার সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্যাটাস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কী গুরত্বপূর্ণূ ভূমিকা পালন করতে পারে! তবে মনে রাখবেন, ভিডিওটি হতে হবে সুনির্মিত। কেবল ভিডিও দেখানোর জন্য যেন ভিডিও দেখানো না হয়। এর যেন একটি স্পষ্ট ও শক্তিশালী মেসেজ থাকে এবং তা বেশির ভাগ দর্শকের কাছে বোধগম্য হয়।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।