তথ্যপ্রযুক্তির সামগ্রিক দিকসহ নিজের প্রযুক্তি ভাবনা নিয়ে সি নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিজি-মার্ক সল্যুশন-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ শাহরিয়ার আলম

সি নিউজ: প্রযুক্তি ভুবনে আপনার পথচলা শুরু কীভাবে?
উত্তর: ২০০২ সালে একটি কোম্পানির সাধারণ কর্মচারি হিসেবে আমার কর্মজীবন শুরু হয়। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি বিষয়ে আমার অনুরাগটা একটু বেশিই ছিলো। তাছাড়া বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির দিকে। জীবনকে আরো সহজীকরণ ও নিরাপত্তায় উন্নত রাষ্ট্রগুলো নিজেদের শীর্ষে রেখেছে বহু আগে থেকে। সে তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম, তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের তথ্য প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে এবং বিভিন্ন সেক্টরের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করি ডিজি-মার্ক সল্যুশন। মূলত সিকিউরিটি আইটেমস নিয়ে স্বল্প পরিসরে প্রযুক্তি ভুবনে আমাদের পথচলা শুরু।

সি নিউজ: যদি এক বাক্যে নিজেকে মূল্যায়ন করতে হয় তাহলে কীভাবে করবেন?
উত্তর: নিজেকে মূল্যায়ন করার মতো তেমন কিছুই হয়তো এখনো করা হয়নি তবে যখন নিজের অতীতকে বর্তমান অবস্থার সাথে তুলনা করি তখন নিজের মধ্যে একটি ভালো লাগা কাজ করে। বিশেষ করে ডিজি-মার্ক সল্যুশনের মতো একটি টিমকে নেতৃত্ব দিতে পারছি এবং দেশের প্রযুক্তির অগ্রসরে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারছি এটিই আমাকে তৃপ্তি দেয়।

সি নিউজ: জীবনে চলার পথে কোন গুণাবলীকে আপনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
উত্তর: আমি মনে করি জীবনে চলার পথে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী হলো, শেখার আগ্রহ এবং কোন কিছু করার সদিচ্ছা। এছাড়াও এই দীর্ঘ পথচলায় যেটা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি তা হলো সততা আর ত্যাগ, যা নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধান ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছে।

সি নিউজ: প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় এই পরিবেশে আপনার প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান কিসের?
উত্তর: এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান হলো আমার তরুণ টিমের। ডিজি-মার্ক সল্যুশনের প্রতিটি সদস্যের ত্যাগ ও ভালোবাসার কারণে আজকে আমরা এতটুকু পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়াও পণ্যের গুণগত মান এবং কাস্টমারদের সন্তুষ্টি অর্জন উল্লেখযোগ্য।

সি নিউজ: গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য আপনি কোন বিষয়গুলোর উপর জোর দেন?
উত্তর: গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য আমরা সবসময় দুটো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এগুলো হচ্ছে প্রোডাক্ট কোয়ালিটি এবং সার্ভিস। প্রথমত প্রতিটি সিঙ্গেল প্রোডাক্ট যাতে মানসম্পন্ন হয় এবং তার পাশাপাশি ক্রেতারা পণ্য ক্রয় থেকে শুরু করে ইন্সটলেশন পর্যন্ত যাতে যাবতীয় সহযোগিতা পায়, সেজন্য আমাদের ডেডিকেটেড অভিজ্ঞ টেকনিক্যাল টিমের আন্তরিকতার সাথে সাপোর্ট নিশ্চিত করি।

সি নিউজ: আপনাদের প্রধান পণ্য ও সেবাগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে বলুন।
উত্তর: আমরা প্রধানত সব ধরনের সিকিউরিটি এবং অটোমেশন প্রোডাক্টস নিয়ে কাজ করে থাকি। সারা বাংলাদেশে এই প্রোডাক্টগুলো ডিস্ট্রিবিউশনের পাশাপাশি দেশের যেকোন স্থানে তা দক্ষতার সাথে ইন্সটলেশনের কাজও করে থাকি। প্রথমবস্থায় আমরা অল্প কিছু সিকিউরিটি আইটেমস নিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে আমাদের প্রোডাক্টস লাইন আপ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের সল্যুশনগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশেষ করে পার্কিং ব্যারিয়ার সল্যুশন, অ্যাক্সেস কন্ট্রোল এন্ড টাইম অ্যাটেনডেন্স সল্যুশন, এন্ট্রান্স সল্যুশন, সিকিউরিটি ইন্সপ্যাকশন সল্যুশন, পোস সল্যুশন, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন, স্মার্ট হোটেল ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন, হোম অটোমেশন ইত্যাদি। আর আমরা এই সল্যুশনগুলোর গুণগতমান রক্ষায় হাই-কোয়ালিটি প্রোডাক্টস-এর অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত করি, বিশেষ করে স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ZKTeco, Virdi, Nexakey, DSSPA, Realtime, Dahua, Hikvision- সহ আরো অনেক ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টস, যেমন: অ্যাক্সেস কন্ট্রোল টার্মিনাল, টাইম অ্যাটেনডেন্স ডিভাইস, সিসি ক্যামেরা, মনিটর, স্মার্ট ডোর লক, ভিডিও ডোর ফোন, আইপি ফোন, আর্চওয়ে গেট, ব্যাগেজ স্ক্যানার, মেটাল ডিটেক্টর, পিএ/কনফারেন্স সিস্টেম, নেটওয়ার্কিং কম্পোনেন্টস ইত্যাদি।

সি নিউজ: দেশ ও দেশের বাইরে নিজেদের পণ্য ও সেবা সম্প্রসারণের জন্য কোন ব্যবসায়িক কৌশল অবলম্বন করেছেন?
উত্তর: আপাতত আমরা দেশের সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রিতে আরো বৃহৎ আকারে অবদান রাখার চেষ্টা করছি। বর্তমানে ক্রেতাদের একটি বড় অংশ অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়েছে , এই সংখ্যাটি প্রতিনিয়তই বাড়ছে এবং অনলাইন ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ফলে ক্রেতাগণ সময় এবং শ্রম দুটোই সাশ্রয় করতে পারে। আর আমরা অনলাইনকে একটি মূখ্য কৌশল বা সুবিধা হিসেবে ধরে নিয়েছি। অনলাইনে প্রোডাক্টস কনফার্ম করার পর দেশের যেকোন স্থানে আমরা তা অতি অল্প সময়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনভেদে আমাদের অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররাও দেশের যেকোন স্থানে গিয়ে দক্ষতার সাথে ইন্সটলেশন এবং সার্ভিস দিয়ে আসে। এছাড়াও আমরা অনলাইন এবং ফিজিক্যাল দুটোতেই নলেজ শেয়ারিং-এর মাধ্যমে কাস্টমারদেরকে প্রোডাক্টস ফিচার এবং ব্যবহার সম্পর্কে যথাযথ তথ্য দিয়ে আসছি। যা কাস্টমার স্যাটিসফেকশন নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা ডিজি-মার্ক সল্যুশনকে আরো ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছি।

সি নিউজ: বাংলাদেশের প্রযুক্তি ভুবনের বর্তমান অবস্থা, সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
উত্তর: করোনা মহামারী ও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দেশের মধ্যে যুদ্ধের কারণে আইটি এবং সিকিউরিটি প্রোডাক্টসমূহের দাম বৃদ্ধিসহ, আমদানি সংকোচনের মতো কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই প্রযুক্তি বাজারকে কিছুটা বেগ পোহাতে হচ্ছে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের প্রসারে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, ডিজিটাল সেন্টারের মতো অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত বহুগুণে সম্প্রসারিত হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

সি নিউজ: প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা ব্যবহারকারীদের কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
উত্তর: প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা ব্যবহারকারীরা পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম পণ্যের কোয়ালিটির দিকটিকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তার জন্য ভালো মানের ব্র্যান্ডের পণ্য সিলেক্ট করতে হবে। সাধারণ পণ্য কেনার ফলে ক্রেতারা বার বার পণ্য ক্রয় করার প্রয়োজন পড়ে কারণ নন-কোয়ালিটি পণ্য গুলো বেশিদিন ব্যবহার উপযোগী থাকে না। এর ফলে আমাদের বেশি পরিমাণে আমদানি করতে হয়, অন্যদিকে নন-কোয়ালিটি পণ্যগুলো দ্বারা বর্জ্য সৃষ্টি হয় যা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই ব্যবহাকারীদের ভালো মানের পণ্য ক্রয়ের দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত যার ফলে আমদানি ব্যয় কমানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ ও পরিবেশকে অতিরিক্ত বর্জ্য থেকে রক্ষা করা যায়।

সি নিউজ: তরুণ প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর: যেসব তরুণের প্রযুক্তির প্রতি অনুরাগ রয়েছে আমি চাইব তারা যাতে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পণ্য ও সেবা সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সিম্পল পলিসিকে অনুসরণ তাহলে তারা এই সেক্টরে ভালো কিছু করতে পারবে আশা করি। এছাড়াও প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে নিজেকে আপডেট রাখতে হবে এবং নিজেকে সবসময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।

সি নিউজ: আগামী দশ বছর পর আপনার প্রতিষ্ঠান ও আপনাকে কোথায় দেখতে চান?
উত্তর: আমরা চেষ্টা করছি প্রযুক্তি খাতে নিজেদেরকে অনেকদূর এগিয়ে নেওয়ার। বর্তমান সরকার প্রযুক্তিবান্ধব হওয়ায় এবং সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আমি আশা করি আগামী দশ বছরের মধ্যে আমার এই প্রতিষ্ঠানটি আমদানির বিকল্প হিসেবে সিকিউরিটি এবং আইটি প্রোডাক্টস সমূহ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের সক্ষমতা অর্জন করবে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের সিকিউরিটি ও আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে এবং নিজের প্রতিষ্ঠানকে শীর্ষ অবস্থানে রাখতে সক্ষম হবো।

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।