মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন, ওবারকোখেন (জার্মানি) থেকে ফিরে
জার্মানির শান্ত ছোট্ট শহর ওবারকোখেন। পাহাড়ে ঘেরা এই শহরের বাতাসে মিশে আছে নিখুঁততার গন্ধ। এখানেই কিংবদন্তি অপটিক্স নির্মাতা জাইস এর সদর দপ্তর। বহু দশক ধরে মহাকাশ, চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অবদান রাখা প্রতিষ্ঠানটি এখন স্মার্টফোন ক্যামেরার জগতে নতুন অভিযানে নেমেছে। তাদের এই যাত্রায় সঙ্গী চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভো। একসাথে কাজ করে তারা বদলে দিচ্ছে মোবাইল ফটোগ্রাফির সংজ্ঞা। আর সেই গল্পে বাংলাদেশও হয়ে উঠছে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
ওবারকোখেনের নীরব রাস্তায় হাটলে ঢাকার কোলাহল মনে হয় দূরের কোনো গল্প। কিন্তু জাইস ইনোভেশন সেন্টারে প্রকৌশলীরা তৈরি করছেন এমন প্রযুক্তি, যা ঢাকার লাখো মানুষের স্মার্টফোনে প্রাণ সঞ্চার করছে।
এক সময় নাসার অ্যাপোলো মিশনে ব্যবহৃত লেন্স তৈরি করা জাইস এখন মনোযোগ দিচ্ছে ছোট্ট ক্যামেরায়, যা প্রতিদিন আমাদের জীবনের গল্পগুলো ধরে রাখে।
জাইস ফটোনিক্স অ্যান্ড অপটিক্স বিভাগের প্রধান ইওয়াখিম কুস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা শুধু লেন্স বানাই না, আমরা বিশ্বাস গড়ি’। তিনি জানান, ভিভো ও জাইসের সহযোগিতা কেবল নামে একটি সহযোগিতা নয়, এই যৌথ গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অপটিক্যাল হার্ডওয়্যার থেকে শুরু করে ইমেজ প্রসেসিং অ্যালগরিদম, রঙ, বোকেহ বা লো-লাইট পারফরম্যান্স প্রতিটি খুঁটিনাটি আমরা একসাথে তৈরি করি।’
এই সফরে একটি বিষয় স্পষ্ট, বাংলাদেশ এখন অগ্রাধিকারের তালিকায়। কুস বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা সম্ভাবনাময় ডিজিটাল অর্থনীতি হিসেবে দেখি। এখানকার বেশিরভাগ ব্যবহারকারী মানুষ তরুণ ও সৃষ্টিশীল। তারা নিউইয়র্ক, লন্ডন বা সাংহাইয়ের মতো চমৎকার ইমেজিং অভিজ্ঞতা পাওয়ার অধিকার রাখে।’
ভিভো’র দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলের সিনিয়র আইএমসি ম্যানেজার কংচং ঝেং বলেন, বাংলাদেশ আমাদের কাছে কোনো পরবর্তী ভাবনা নয়, বরং অগ্রাধিকার। তিনি জানান, ভিভো ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বিক্রয়োত্তর সেবা, স্থানীয় বিপণন প্রচারণা এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
ভিভো’র সিনিয়র প্রোডাক্ট ম্যানেজার ফাইয়াদ ঝাং যোগ করেন, ‘বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা শোনা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতামত আমাদের পরবর্তী উদ্ভাবনের পথ দেখায়।’
জাইস ইমেজিং ল্যাবে ধুলাবালি, আর্দ্রতা ও তাপের মতো কঠিন পরিবেশে নতুন লেন্স ও সেন্সর পরীক্ষা করা হয়। জাইসের ইমেজিং প্রোডাক্ট ম্যানেজার এলিয়ট শি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি শুধু ভালো ছবি তোলার ব্যাপার নয়। আমরা আলোর প্রবাহ, স্বচ্ছতা এবং রঙের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিই।’
সর্বশেষ যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভিভো এক্স২০০-এ রয়েছে: বড় ১-ইঞ্চি সেন্সর, জাইস টি কোটিং*, উন্নত এআই-নির্ভও পোর্র্ট্রেট মোড, ন্যাচারাল কালার ক্যালিব্রেশন, সিনেমাটিক ভিডিও মোড, পেশাদার মানের বোকেহ সিমুলেশন ইত্যাদি। এই ফিচারগুলো স্মার্টফোন ফটোগ্রাফিকে ডিএসএলআর-এর কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন এখন ফটোগ্রফির প্রধান মাধ্যম। এই প্রেক্ষাপটে জাইস ও ভিভো শুধু প্রযুক্তির সীমা বাড়াচ্ছে না, বরং তৈরি করছে এক নতুন প্রজন্মের গল্প।
বাংলাদেশের তরুনরা এখন ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং ও কনটেন্ট ক্রিয়েশনে বেশি বেশি যুক্ত হচ্ছে। জাইস ও ভিভো এর এই সহযোগিতা তাদের হাতে দিচ্ছে আরও স্বচ্ছ, আবেগময় ও নিখুঁত ভাব প্রকাশের হাতিয়ার।
এক নজরে জাইস- প্রতিষ্ঠিত: ১৮৪৬ সাল; বিশেষজ্ঞতা: অপটিক্স ও প্রিসিশন ইঞ্জিনিয়ারিং; বিশ্বখ্যাতি: নাসার অ্যাপোলো মিশনের ক্যামেরা, উন্নত মাইক্রোস্কোপ ও প্রিমিয়াম ক্যামেরা লেন্স; ভিভো’র সঙ্গে অংশীদারিত্ব: ২০২০ সাল থেকে উন্নত মোবাইল ইমেজিং সিস্টেম উন্নয়নের জন্য।