স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরি ও দেশের ডিজিটালাইজেশন যাত্রা ত্বরাণ্বিত করতে জিপিএ ৩.০ উদ্বোধন করেছে গ্রামীণফোন। স্টার্টআপ, ডেভেলপার এবং উদ্ভাবকদের প্রয়োজনীয় রিসোর্স দিয়ে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের উদ্ভাবন, প্রবৃদ্ধি ও সম্ভাবনা উন্মোচনের উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে গ্রামীণফোন প্রথম ‘জিপি অ্যাকসেলেরেটর’ উদ্যোগ গ্রহণ করে।
অনলাইনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান। জিপি অ্যাকসেলেরেটর প্রোগ্রামের মাধ্যমে কোভিডের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘গ্লোবাল ফার্স্ট’ বাংলাদেশি স্টার্টআপগুলোয় সহায়তায় এ বছরের শুরুতে গ্রামীণফোনের সাথে দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে অগ্রণী তিন প্রতিষ্ঠান বেটারস্টোরিজ লিমিটেড, লাইটক্যাসেল পার্টনার্স এবং আপস্কিলের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বারো মাসব্যাপী চলমান প্রোগ্রাম জিপি অ্যাকসেলেরেটর ৩.০ আয়োজনের মাধ্যমে দেশের সেরা স্টার্টআপ খুঁজে বের করার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে উপযুক্ত রিসোর্স প্রদানের মাধ্যমে তাদের সম্ভাবনা উন্মোচনের লক্ষ্যে শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও ডিজিটাল বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি পার্টনার গ্রামীণফোন ও দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম নির্মাণকারী এই তিন প্রতিষ্ঠান অংশীদারিত্ব করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “আমি শুরু থেকেই গ্রামীণফোন অ্যাকসেলেরেটরের যাত্রার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ৬ বছর পেরিয়েছে এবং আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে গ্রামীণফোন দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের তৈরিতে নিজেদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে। আমি জানতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত ৬টি ব্যাচ জিপি অ্যাকসেলেরেটর প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। তারা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশের এবং সমগ্র ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে অবদান রাখছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশের সম্ভাবনাময় তরুণরা উদ্ভাবনী স্টার্টআপ তৈরি এবং ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে এর প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং অন্যান্য সহায়তা পাবেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তরুণদের অনুকরণ না করে উদ্ভাবন করতে উৎসাহিত করেছেন। জিপি অ্যাকসেলেরেটরের একই বিশ্বাস এবং তরুণদের প্রস্তুত করতে নিরলসভাবে অবদান রাখছে। । একটি স্বনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে স্টার্টআপগুলো আমাদেরকে সহায়তা করছে। প্রযুক্তি-নির্ভর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের তরুণদের সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। আমি সরকারী এবং বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠান কে আহবান জানাই হাতে হাত রেখে একটি আত্মনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে।”
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, “প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। এখন পর্যন্ত এ যাত্রায় দেশের নাগরিকদের ডিজিটাল চাহিদা মূল্যায়নে এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক সমাধান প্রদানে জিপি অ্যাকসেলেরেটরের ৪৪টি স্টার্টআপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের পার্টনাদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে দেশের মেধাবীদের সম্ভাবনা উন্মোচনে সহায়ক ইকোসিস্টেম তৈরির ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।”
জিপি অ্যাকসেলেরেটর প্রোগ্রাম ইতোমধ্যে ৪৪টি সম্ভাবনাময় স্টার্টআপের (দেশজুড়ে ৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে) অংশগ্রহণে সফলভাবে ৬ পর্ব শেষ করেছে। গ্রামীণফোন ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি (৪.২ কোটির বেশি সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা এবং ১০ কোটির বেশি অন্যান্য সহায়তা) প্রদান করেছে, যেখানে প্রতিটি দল প্রায় ৬৫ লাখ টাকা সমমানের সহায়তা পেয়েছে। সেবা.এক্সওয়াইজেড, সিএমইডি হেলথ, ঢাকাকাস্ট, ক্র্যামস্ট্যাক, ডক্টরকই এবং সম্ভাবনাময় এমন আরও অনেক স্টার্টআপ জিপি অ্যাকসেলেরেটর প্রোগ্রামের মাধ্যমে সফল হয়েছে। সেবা.এক্সওয়াইজেড, সিএমইডি হেলথ ও পার্কিংকই ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের ভ্যালুয়েশন মার্ক অতিক্রম করেছে। ডেমো ডে থেকে গড়ে ১৬ গুণ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সাড়ে চার মাস বুট ক্যাম্প চলাকালে স্টার্টআপের ভ্যালু বৃদ্ধি পেয়েছে ৩.৭ গুণ।
ডিজিটাল ডিভাইড কমানোর করার পাশাপাশি দেশে বৈষম্য হ্রাসে এবং নারী ক্ষমতায়ন উৎসাহিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে জিপি অ্যাকসেলেরেটর। জাতীয় আউটরিচ ও আঞ্চলিক ডিজাইন থিংকিং বুট ক্যাম্প করে পাইপলাইন বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে সুযোগ তৈরিতে জিপি অ্যাকসেলেরেটর তিনটি পার্টনারের কনসোর্টিয়ামের সাথে কাজ করবে। এছাড়াও, কোনো খরচ ছাড়া সবার জন্য অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে উদ্ভাবনের অনুশীলনী নিশ্চিতে এবং ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি ওপর আলোকপাত করে বাস্তবিক ক্ষেত্রে ব্যবসার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে কাজ করে জিপি অ্যাকসেলেরেটর।