সিনিউজ ডেস্ক: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে ৬ মে ২০২৩ ৭ম বারের মতো যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাতীয় আইটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলো। শনিবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) কর্তৃক দিনব্যাপী আয়োজিত এই প্রতিযোগিতাটি রাজধানী ঢাকার মিরপুরে বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেন্টার ফর সার্ভিসেস এন্ড ইনফরমেশন অন ডিজ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) এর সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়।
উক্ত আয়োজনের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিসি এর নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি এর চেয়ারম্যান মোঃ সামশুল হুদা, এফসিএ এবং সিএসআইডি’র নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোঃ আলী নূর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিসি এর প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক মোঃ গোলাম সারওয়ার।
প্রধান অতিথি হিসেবে বিসিসি এর নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার বলেন যে যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য জাতীয় আইটি প্রতিযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষতা, মেধা এবং প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে, ফলে আইসিটি চর্চার ব্যাপক সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ ধরণের আয়োজন যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উৎসাহ প্রদান করার পাশাপাশি আইসিটি ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যে সকল বাধা এবং চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয় তা হ্রাস করতে ভুমিকা রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন যে যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। তাদের সাথে নিয়েই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। রণজিৎ কুমার আরও বলেন যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ৪ টি গুরুত্বপূর্ণ পিলার এর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় ছিল মানব সম্পদ উন্নয়ন, যে বিষয়ে বিসিসি নিরলস ভাবে কাজ করেছে এবং আগামীতেও কার্যক্রম চলমান থাকবে।
বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোঃ আলী নূর বলেন যে সমাজের বিশেষভাবে সক্ষম বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাইরে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ কঠিন হবে। তিনি আরো বলেন প্রতিবন্ধী যুবকদের দেশের উন্নয়নে সক্রিয় অবদান রাখতে তাদের সক্ষম করে তোলার এক অন্যতম প্রয়াস হল জাতীয় আইটি প্রতিযোগিতা। বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুত আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে বাংলাদেশের উপযুক্ত মানব সম্পদ হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ প্রতিযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্ব রাখছে।
সিএসআইডি’র নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম সারাদেশ থেকে অংশ নেওয়া যুব মেধাবী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনুপ্রাণিত করেন। তিনি বলেন আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভুমিকা থাকবে। তাই সকলে মিলে একসাথে কাজ করবার তিনি আহ্বান জানান।
প্রাথমিকভাবে ১৪ থেকে ২২ বছর বয়স পর্যন্ত আগ্রহীগণ ডাক, ই-মেইল এবং অনলাইনের মাধ্যমে গত ২৬ এপ্রিল ২০২৩ এর মধ্যে উক্ত প্রতিযোগিতায় তাদের নিবন্ধণ সম্পন্ন করেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার (এনডিডি) অর্থাৎ মোট ৪ ক্যাটাগরিতে সারাদেশ থেকে মোট ১১৭ জন প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। উক্ত প্রতিযোগিতায় মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট ও ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতা যাচাই করা হয়।
জাতীয় আইটি প্রতিযোগিতা ২০২৩ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রত্যেক ক্যাটাগরি থেকে সেরা প্রথম তিনজনকে অর্থাৎ ৪ ক্যাটাগরিতে মোট ১২ জন প্রতিযোগীকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া, প্রত্যেক ক্যাটাগরি থেকে একজন করে অর্থাৎ ৪ ক্যাটাগরিতে ৪ জন মেধাবীর নাম আয়োজক কর্তৃপক্ষ বিজয়ী হিসেবে ঘোষনা করেন। ৭ম জাতীয় আইটি প্রতিযোগিতা ২০২৩ এর বিজয়ীরা হলেন:
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ক্যটাগরিতে বরিশালের মো: রবিউল বিশ্বাস (১ম), রাজশাহীর মো: হাসিবুর রহমান (২য়) এবং রংপুরের মো: আবুজর রহমান (৩য়)। শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্যটাগরিতে ঝিনাইদাহের মো: শাকিল আহমেদ (১ম), বরিশালের মো: সাজ্জাদুল ইসলাম স্বাধীন (২য়) এবং পটুয়াখালীর নিয়ামুর রশিদ শিহাব (তয়)। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ক্যটাগরিতে লালমনিরহাটের মো: রবিউল আউয়াল শুভ (১ম), ঢাকার সুমাইয়া আকতার মিতু (২য়) এবং রংপুরের মো: তাহিমুর ইসলাম (৩য়)। সবশেষে, এনডিডি ক্যটাগরিতে ঢাকার মুহ্তাছিন চৌধুরী (১ম), ময়মনসিংহের নাঈম ইসলাম (২য়) এবং বরগুনার মো: সাইফুর রহমান পিয়ান (৩য়)।
প্রত্যেক বিজয়ী প্রতিযোগীকে পুরস্কার স্বরূপ একটি স্যামসাং ব্রান্ডের স্মার্ট ফোন এবং জেনওয়েব টু কোম্পানী কর্তৃক উপহার সামগ্রীসহ ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। বিজয়ীরা বিসিসি কর্তৃক পরিচালিত উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্সে বিনা ফি’তে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে এবং বিজয়ী ১২ জনের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে শ্রেষ্ট ৪জন আগামী অক্টোবরে দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে বলে জানান বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ম্যানেজার (সিস্টেমস) এবং এই আয়োজনের সমন্বয়ক মো. গোলাম রব্বানী। এছাড়া, আয়োজক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সারাদেশ থেকে আগত প্রত্যেক প্রতিযোগীকে যাতায়াতভাতা প্রদান করা হয়।