সিনিউজ ডেস্ক: দেশের শিল্পখাতের বরেণ্য ১২ জন শিল্প উদ্যোক্তাকে নিয়ে ড. মো : সবুর খান সম্পাদিত ”পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম” গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব আজ ২৩ জানুয়ারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটির ইনোভেশন এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত “উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক ডিআইইউ ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া বক্তৃতা মালার” সংকলিত গ্রন্থ এই ”পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম”।
২০১৬ সালের ৩০ মার্চ পিএইচপি গ্রæপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুফী মোঃ মিজানুর রহমানকে দিয়ে এ বক্তৃতা মালা শুরু হয়েছিল। একে একে দেশের শিল্পখাতের বরেণ্য ১২ জন শিল্প উদ্যোক্তা এ বক্তৃতামালায় অংশগ্রহন করেন এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেন তাদের সাফল্যগাঁথা। সিদ্ধান্ত ছিল এই ১২ জন সফল উদ্যোক্তার বক্তৃতাসমূহ নিয়ে পরবর্তিতে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ব্যবসা, অথনীতি ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের শিক্ষার্থীদের জন্য রেফারেন্স পুস্তক হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করবে। সে প্রতিশ্রুতির অংশ হিসবে আজ এ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হল। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সম্মানিত আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটির চেয়ারম্যান ও ”পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম” গ্রন্থেও সম্পাদক ড. মোঃ সবুর খান ।
গ্রন্থে স্থান পাওয়া শিল্প পরিবারগুলো হল ঃ ইস্পাহানি গ্রুপ, এ কে খান গ্রুপ, রহিম আফরোজ গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, দেশ গ্রুপ, আবদুল মোনেম গ্রুপ,এসিআই লিমিটেড, প্রাণ-আর এফ এল গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ, এপেক্স গ্রুপ ও ট্রান্সকম গ্রুপ।
অনুষ্ঠানে ঐ ১২ শিল্প পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা জীবিত সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন আর যারা বেঁচে নেই তাদের প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কর্ণধাররা অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, ট্রান্সকম লিমিটেডের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান, আনোয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান মানওয়ার হোসেন, আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন, দেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান রোকেয়া কাদের, এডকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতিয়ারা সাফিয়া চৌধুরী, রহিম আফরোজ গ্রুপের গ্রুপ ডিরেক্টর নিয়াজ রহিম, এসিআই ইনফিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুস্মিতা আনিস, ইস্পাহানি গ্রুপের পরিচালক মীর্জা আহমেদ ইস্পাহানি ও একে খান গ্রুপের উপদেষ্টা ড. আবদুল মজিদ। অনুষ্ঠানে সভাতিত্ব করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড, এম লুৎফর রহমান । বক্তব্য রাখেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনোভেশন এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের পরিচালক আবু তাহের খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তাহসিনা ইয়াছমিন ও সামিহা থান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের জীবনের অনেক গুলো কঠিন কাজের মধ্যে একটি হল মানুষকে না বলতে পারা। তাই তোমাদের প্রতি আমার আহ্বান রইলো জীবনে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে হলে না বলা শিখতে হবে।” তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি সমতা ভিত্তিক ও কল্যাণকামী রাষ্ট্র।
সিপিডি এর সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ডিআইইউ’র চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খানের প্রতি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ” পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবন সংগ্রাম’ এই বইটির মাধ্যমে যেসকল কালজয়ী উদ্যোক্তাদের সংগ্রামের ইতিহার তুলে এনেছেন ড. মোঃ সবুর খান, তা নতুন প্রজন্মের কাছে আদর্শ হিসেবে তাদের প্রতিভাকে দেশের কাজে লাগাতে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।”
এসিআই লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা জনাব আনিস উদ দৌলা। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, ” তোমরা মনে রাখবে শিক্ষার কোনো সময় নেই। আমাদের জীবন পুরোটাই শিক্ষার জন্য। তাই সঠিক শিক্ষা নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।”
পরবর্তীতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান এবং ‘পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবন সংগ্রাম” গ্রন্থের সম্পাদক ড. মোঃ সবুর খান তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি তুলে ধরেন। এসময় তিনি বলেন, আমার এই বইটি সম্পাদনার একটা বড় উদ্দেশ্য ছিলো আমরা ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানদের বিদেশিদের নয় বরং আমাদের দেশের উদাহরণ দিয়ে অনুপ্রেরণা দিতে পারি।”
টান্সকম লিমিটেডের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এমন উদ্যোগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের পথচলার কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ” টান্সকম লিমিটেড এমন একটি কোম্পানি যেখানে পুরো জাতির জন্য আমরা সেবা নিশ্চিত করে থাকি। আমাদের কোম্পানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমরা সকল ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকি।” তিনি আরো বলেন, ” আমার বাবা লতিফুর রহমান তার সারাজীবনের সপ্ন, শ্রম দিয়ে এই কোম্পানিকে গড়ে তুলেছেন। ১৮৮৫ সাল থেকে সামান্য চা চাষের মধ্যে দিয়ে এর যাত্রা শুরু করে এখন অব্দি তা অব্যাহত রেখেছি আমরা”।
পরবর্তীতে ড. মোঃ সবুর খানের সম্পাদিত বইয়ের প্রশংসা করে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ” এমন সুন্দর সবলীল ভাষায় বইটি লেখা হয়েছে যে এটা শুধু ড্যাফোডিলের নয় বরং বাংলাদেশের সকল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবে”। তিনি আরো বলেন, ” এই বইটি সাংবাদিকদের জন্য বেশ ভালো একটি সোর্স হতে পারে। কারণ প্রথম আলোর একজন সম্পাদক হিসেবে আমরা চাই আমাদের পত্রিকায় দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বদের কথা বলতে সেখানে আমাদের বলতে হয় বলতে হয় পরিমনি বা সাকিব খানের কথা।
এ গ্রন্থে যে ১২ টি প্রবন্ধ অন্তভর্‚ক্ত করা হয়েছে , তার মধ্যে ১১টি হচ্ছে ১১ জন বরেণ্য ব্যক্তির উপর। বাকি প্রবন্ধটি একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানের উপর, যেখানে একাধিক ব্যক্তি অনন্য কর্মকৌশল, অভিন্ন চিন্তাধারা ও অনুকরনীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একত্রে বিলিীন হয়ে গেছেন। আর প্রতিষ্ঠানটি হল ইস্পাহানি গ্রুপ। ইরানের ইস্পাহান থেকে আসা।
এ পুস্তক শিক্ষার্থীদেরকে তাদের অধিত তাত্তি¡ক জ্ঞানকে বাস্তবতার আলোকে বুঝতে ও শিখতে সাহায্য করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। উল্লিখিত ১২জন উদ্যোক্তার উপর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১২টি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করা হয়েছে।