৪৫তম আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালে চারশ’রও বেশি শীর্ষস্থানীয় প্রোগ্রামারের অংশগ্রহণ

সিনিউজ ডেস্ক: আজ রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়া ৪৫তম ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি) ওয়ার্ল্ড ফাইনালসে অংশগ্রহণ করেছেন বিশ্বের চারশ’রও বেশি প্রতিশ্রুতিশীল কোডার। প্রতিযোগিতার বেশ কয়েকটি ধাপের পর আগামী ১০ নভেম্বর একটি দলকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং অন্যান্য নয়টি দলকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করা হবে।

৬ নভেম্বর শুরু হওয়া এই বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় প্রায় ৭০টি দেশের ১৩৭ টি দলের ৪৫০ জনেরও বেশি প্রতিযোগী এবং সারা বিশ্ব থেকে ১২শ’ জনের বেশি অতিথি অংশ নিয়েছে। প্রথম দুই দিনের বিভিন্ন ওয়ার্মআপ ইভেন্ট এবং প্রতিযোগিতার পর এই ইভেন্টের মূল প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে এবং প্রতিযোগীরা অ্যালগরিদমের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে তিনটি দলে ভাগ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। প্রত্যেক দল একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করে।

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, বাংলাদেশ সরকার, তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও হুয়াওয়ের আয়োজনে এবারের আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সহযোগিতা, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং প্রতিকূলতার মধ্যে পারফর্ম করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি) হলো একটি প্রিমিয়াম অ্যালগরিদমিক প্রোগ্রামিং কনটেস্ট প্ল্যাটফর্ম; যা অ্যাকাডেমিয়া, শিল্পখাত এবং তরুণ পেশাদারদের কম্পিউটিংয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে অনুপ্রাণিত করার জন্য আয়োজন করা হয়। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আইসিটি অবকাঠামো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে টেকনোলজিস লিমিটেড এই অনুষ্ঠানের ডায়মন্ড স্পন্সর।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে ওয়ার্ল্ড ফাইনালস কনটেস্টের আইসিপিসি ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. মাইকেল জে. ডোনাহু বলেন, “আইসিপিসি কমিউনিটি কম্পিউটিংয়ের শিক্ষার্থীদের কঠোর প্রশিক্ষণ এবং সেরা প্রতিযোগীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন খাতের সুবিধা পেতে হলে আমাদের অনেক প্রবলেম সলভার (সমস্যা সমাধানকারী) প্রয়োজন। আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনাল হচ্ছে শিক্ষার্থী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক, যা দারুণ প্রতিযোগিতা তৈরি করতে সক্ষম।”

এ নিয়ে চেক প্রজাতন্ত্রের চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ের এলডার অরলভ বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে, এই প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং কমিউনিটি থেকে যারা বেরিয়ে আসেন; তারা আমাদের চারপাশের আধুনিক বিশ্ব গঠনে দুর্দান্ত কাজ করেছে। আমি আরও মনে করি, এই কমিউনিটির লোকদের তাদের চারপাশের বিষয়গুলোর পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে, যাতে তারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য দুর্দান্ত সুযোগ পায়।”

আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা প্রতিযোগিতা এবং আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা সমাপনী অনুষ্ঠানের পর ১০ নভেম্বর আইসিপিসি ফাইনালস ঢাকা শেষ হবে; যেখানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

বিশ্বব্যাপী আইসিটি অবকাঠামো সেবাখাতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে হুয়াওয়ে আইসিপিসি, আইএমও, আইসিএইচও এবং আইএমসি এর মতো শীর্ষস্থানীয় কিছু প্রতিযোগিতায় স্পনসর করে। আইসিপিসি প্রতিযোগিতা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জের বিষয়কে তুলে ধরে, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নতুন উচ্চতায়  নিয়ে যায় করে এবং শীর্ষ প্রতিভাবানদের চিহ্নিত করে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে।

এই বিষয়ে হুয়াওয়ের স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভিপি ওয়াং আইমেং বলেন, “এই ধরনের একটি অনুষ্ঠানের অংশীদার হতে পেরে আমরা আনন্দিত। হুয়াওয়ে সারা বিশ্বের সমস্যা সমাধানকারীদের জন্য আরও গবেষণা প্ল্যাটফর্ম এবং বিশ্বমানের টপিক নিয়ে আসতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা প্রতিযোগীদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি; এর মধ্যে রয়েছে ক্রমাগত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা এবং এর সমাধান।” তিনি আরো বলেন, “একই সময়ে আমরা আইসিপিসিকে সমর্থনের বিষয়টি অব্যাহত রাখব, প্রতিযোগীদের জন্য আরও প্রশিক্ষণ এবং শেখার সুযোগগুলোকে সমর্থন করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরো প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব এবং ব্যক্তিগত সক্ষমতা বিকাশের জন্য কাজ করে যাব।”

একটি ডিজিটাল অর্থনীতিতে ডিজিটাল ট্যালেন্ট (প্রতিভা) ডিজিটাল রূপান্তর এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি। ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের জন্য ডিজিটাল দক্ষতা এবং সাক্ষরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সাল থেকে হুয়াওয়ে স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, সিডস ফর দ্য ফিউচার, হুয়াওয়ে আইসিটি একাডেমি, উইমেন ইন টেক ইত্যাদি সহ বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক প্রতিভা বিকাশ প্রোগ্রাম এবং প্রতিযোগিতা চালু বা স্পনসর করেছে। হুয়াওয়ে ইতোমধ্যে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। স্থানীয় আইসিটি প্রতিভা বিকাশে প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে এই প্রোগ্রামগুলো চালু করা হয়েছে এবং ১৫০ টিরও বেশি দেশের ১.৫৪ মিলিয়ন মানুষ এ থেকে উপকৃত হয়েছে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতার জন্য হুয়াওয়ে ২০২১ সালে ২.৭ বিলিয়ন আরএমবি বিনিয়োগ করেছে, সারা বিশ্বের ৩০০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৯০০টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছে। বিশেষ করে, ডিসিপ্লিন ডিজাইন, স্কুল-এন্টারপ্রাইজ যৌথ প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য সর্বাত্মক এবং মাল্টি-লেভেল ডিসকভারি এবং উচ্চ-স্তরের প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে।

আইসিপিসি প্রতিযোগিতা প্রথম ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ইভেন্টগুলোর মধ্যে একটি। আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা এবং কর্মশালা সাধারণত বিভিন্ন সময়ে সারা বিশ্বে অনুষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড ফাইনালে পরিণত হয়।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।