সিনিউজ ডেস্ক: মোট গ্রাহকের ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ফোরজি গ্রাহক নিয়ে ২০২১ সালে ফোরজি সেবায় নেতৃত্ব আরো সুসংহত করেছে রবি। ২০২১ সালে রবি’র মোট গ্রাহকের ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রাহকই ছিলেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, যা এ খাতে সর্বোচ্চ। আজ ২০২১ সালের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করে এসব তথ্য জানিয়েছে অপারেটরটি।
রবি ১৪ হাজার ৮২২টি ফোরজি সাইট দিয়ে ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ গ্রাহকের জন্য ফোরজি কভারেজ নিশ্চিত করেছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে প্রতি মাসে গ্রাহক প্রতি ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ ৪১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে । ২০২১ সালে রবির ডাটা ব্যবহারকারীরা গড়ে প্রতি মাসে ৪জিবি ডাটা ব্যবহার করেছেন।
২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে রবির গ্রাহক সংখ্যা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৫ কোটি ৩৭ লাখে পৌঁছেছে, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ। একইসাথে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ডাটা গ্রাহক সংখ্যা ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৯৬ লাখে পৌঁছেছে এবং রবির ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২ কোটি ৩৮ লাখে পৌঁছেছে।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ২ হাজার ৪৬ কোটি টাকাসহ বছর শেষে রবির মোট আয় ৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে রবির আয় বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২১ সালের একই প্রান্তিকে রবির আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ভয়েস সেবায় রবির আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ । ২০২০ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২১ সালের একই প্রান্তিকে ভয়েস সেবা থেকে আয়ের হার ১১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে ডাটা সেবায় ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২০ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২১ সালের একই প্রান্তিকে ডাটা সেবায় আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ৪৯৯ কোটি টাকা মূলধনী বিনিয়োগসহ বছর শেষে রবির মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকায়।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ১৩ কোটি টাকা কর পরবর্তী (পিএটি) মুনাফাসহ ১৮০ কোটি টাকা পিএটি নিয়ে বছর শেষ করে রবি । ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে পিএটি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। তবে ২ শতাংশ ন্যূনতম করের বাধা না থাকলে পিএটি’র পরিমাণ হতো ৩৪৩ কোটি টাকা।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ইবিএআটিডিএ ছিল (৩৮ দশমিক ২ শতাংশ মার্জিনসহ) ৭৮১ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে (৪০ দশমিক ৬ শতাংশ মার্জিনসহ) ৩ হাজার ৩০৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ২০২০ সালের তুলনায় এটি ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ১ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, যা ওই প্রান্তিকের মোট আয়ের ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২১ সালে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে মোট ৪ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা জমা দিয়েছে রবি যা ওই বছরের মোট আয়ের ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল দশমিক ০২ টাকা এবং পুরো বছরের ইপিএস ছিল দশমিক ৩৪ টাকা, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
রবির পরিচালনা পর্ষদ ২% হারে চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে (অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ০.২০ টাকা)। অতএব, ৩% অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ সহ, ২০২১ সালে দেওয়া মোট নগদ লভ্যাংশ হলো ৫% (অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ০.৫০ টাকা), যা ২০২১-সালের পিএটি-এর ১৪৫.৩%। ১৫ই মার্চ, ২০২২ অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রবির ২৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা আগামী ২৮ এপ্রিল, ২০২২ অনুষ্ঠিত হবে।
কোম্পানির আর্থিক ফলাফল সম্পর্কে রবি’র অ্যাক্টিং সিইও অ্যান্ড সিএফও, এম রিয়াজ রশীদ বলেন,“ মার্কেটে আমাদের প্রবৃদ্ধির কৌশল ধারাবাহিকভাবে কাজ করায় আমরা আনন্দিত। ২০২১-সহ টানা তিনবছর রবি টেলিকম খাতে সর্বোচ্চ আয় বৃদ্ধির হার নিশ্চিত করেছে। ফোরজিতে রবির আধিপত্য প্রমাণ করে যে উদ্ভাবনকে পুঁজি করে ডিজিটাল রূপান্তরে যাত্রায় সঠিক পথেই রয়েছি আমরা।“
মুনাফার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “২০২১ সালে মুনাফা অর্জন করতে পারলেও ২ শতাংশ ন্যূনতম করের ফলে গুরুতর ক্ষতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এই অযৌক্তিক করের বাধ্যবাধকতা না থাকলে আমাদের মুনাফা ১৮০ কোটি টাকার পরিবর্তে ৩৪৩ কোটি টাকা হতো। অন্য কথায়, ২ শতাংশ ন্যূনতম কর প্রত্যাহার করা হলে আমরা ২০২১ সালে আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৬৩ কোটি টাকা বেশি মুনাফা করতে পারতাম।“
২০২১ সালে লক্ষ্যণীয় ডাটা মূল্য হ্রাসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ”নেটওয়ার্কে মোট ডাটা ব্যবহার অনুযায়ী, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে রবির ডাটা ট্র্যাফিক ৬০ দশমিক ০৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কারণে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে প্রতি মেগাবাইট (এমবি) ডাটার গড় মূল্য ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।তাই ডাটা ট্র্যাফিক ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি সত্ত্বেও ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে রবির আয় মাত্র ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।“