সিনিউজ ডেস্ক: ‘আস্থা – স্ট্রেন্দেনিং অ্যাকসেস টু মাল্টি–সেক্টোরাল পাবলিক সার্ভিসেস ফর সারভাইভারস’ প্রকল্পের অগ্রগতি ও অর্জন সম্পর্কে সবাইকে জানাতে এবং জেন্ডার–ভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে আলোচনায় আজ রাজধানীর গুলশান–১ –এ অবস্থিত স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারের কিংস হলে জাতীয় পর্যায়ের এক ডেসিমিনেশন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের এদেশীয় প্রতিনিধি এইকো নারিতা এবং গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত অ্যান ভন লিউয়েন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের জিবিভি ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর রুমানা খান এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এবং বাংলাদেশ সরকার, ইউএনফপিএ, নেদারল্যান্ডের দূতাবাস, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ‘আস্থা’ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী অংশীদার, সুশীলন, স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি (এসইউএস), গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এবং ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের (ওয়াইপিএসএ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে বক্তারা জেন্ডার -ভিত্তিক সহিংসতার উদ্বেগ নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ের মানুষও তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে আস্থা প্রকল্পের বিস্তারিত নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম বলেন, “আমরা যদি প্রত্যেকটি বাড়িকে নারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে নারী নির্যাতন কমে যাবে। এজন্য আমরা যা যা করতে পারি সে ব্যাপারে আমি আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আপনারা এই ছোট বিষয়গুলোকে তৃণমূলে নিয়ে গিয়েছেন এবং সঠিকভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন।”
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (এএসকে) নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল বলেন, “আমরা দেখেছি যে, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে, বিশেষ করে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও মানুষের আচরণগত পরিবর্তনের কারণে অনলাইনে যৌন হয়রানি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে এ ব্যাপারে কাজ করছি। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা পরিবার, গোষ্ঠী থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে হ্রাস করতে সকল অংশীজনদের শিখতে এবং এ বিষয়ক জ্ঞান ভাগ করে নিতে একসাথে কাজ করতে হবে।”
অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার নেদারল্যান্ডস’র রাষ্ট্রদূত অ্যান ভন লিউয়েন বলেন, “আমরা, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস এই সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পেরে এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার ও এ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে সামান্য ভূমিকা পালন করতে পেরে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ’র দেশীয় প্রতিনিধি ড. এইকো নারিতা বলেন, “আস্থা বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষের কাছে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ধারণা, কেন এটি অনুচিত, এটি প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা এবং কেন বিভিন্ন খাতের এ ব্যাপারে কাজ করা দরকার সে বিষয়টি তুলে ধরেছে।”
উল্লেখ্য ‘আস্থা’ প্রকল্পটি জেন্ডার -ভিত্তিক সহিংসতা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বহুবিধ ক্ষেত্রে জনসেবার সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চিতে এবং বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতা ও যৌতুক-সংশ্লিষ্ট সহিংসতার মতো উদ্বেগপূর্ণ বিষয়ের সাথে জেন্ডার -ভিত্তিক সহিংসতার (জিবিভি) বিরুদ্ধে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে। জামালপুর, পটুয়াখালী, বগুড়া ও কক্সবাজার – এ চার জেলার ১২টি উপজেলায় ১০২টি ইউনিয়নে আস্থা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। কমিউনিটি আউটরিচ ও জেন্ডার -ভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এ প্রকল্পের অধীনে, সর্বমোট ২০,৩৯৪টি উঠান বৈঠক, নারীদের সহায়তা পরিচালিত ১৮৩৬টি সভা, ৫০৪টি দম্পতি সভা, ১১টি থিয়েটার শো, ৩০৯টি ভিডিও এবং ৫০টি সচেতনতামূলক সভা আয়োজিত হয়।
জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা হ্রাসে এ প্রকল্প থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলোর আলোকে আলোচনায় অনুষ্ঠান শেষ হয়। বক্তারা জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার মামলাগুলো সমাধানে এবং জেন্ডার -ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা হ্রাস করার জন্য উপযুক্ত যোগাযোগ মাধ্যম, পদ্ধতি এবং কৌশল ব্যবহারে সেবা প্রদানকারী ও স্থানীয় সিএসও, পুরুষ এবং কিশোরদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে বহু অংশীজনদের অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।