৯ম লিডারশিপ সামিটে ভবিষ্যতমুখী নেতৃত্ব নিয়ে দিনব্যাপী আলোচনা

সিনিউজ ডেস্ক: করপোরেট নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা, সংকট মোকাবিলা ও পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক বাস্তবতা নিয়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গত ২২ নভেম্বর রাজধানীর ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ ৯ম লিডারশিপ সামিট। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি–এর পরিবেশনায়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশ (এআইইউবি) ও ইউনাইটেড গ্রুপ–এর সঞ্চালনায়  এবং টুয়েলভ ক্লোদিংয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত এই সামিটে অংশ নেন দেশের শীর্ষ সি–সুইট নির্বাহী, ব্যবসায়িক পেশাজীবী, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, ব্যবসায়িক শিক্ষাবিদ ও বিনিয়োগ ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা। এ বছর সম্মেলনটির প্রতিপাদ্য ছিল – “রেজিলিয়েন্ট লিডারশিপ – থ্রাইভিং অ্যামিড আনসার্টেনটি।”

সামিটে অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শুধু অর্থনৈতিক লক্ষ্য দিয়ে নয়, বরং নির্ধারিত হবে নেতৃত্বের মানদণ্ড দিয়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন দূরদর্শী, নৈতিক, পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম এবং সংকটে টিকে থাকার চেয়ে সুযোগ তৈরি করতে পারদর্শী এমন নেতৃত্ব। নেতৃত্বকে শুধুই কর্তৃত্ব না ভেবে দায়িত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি মূল্য তৈরির পথে এগোনোর সময় এখনি।”

স্বাগত বক্তব্যের পর সম্মানিত প্রধান অতিথি হিসেবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছে যখন যেকোনো খাতের নেতৃত্বকে হতে হবে আরো বলিষ্ঠ। গতানুগতিক সাফল্যের বাইরে আমাদের প্রয়োজন ডেটাভিত্তিক, ঝুঁকি–সচেতন এবং স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত প্রনয়ণকারী নেতৃত্ব। রেজিলিয়েন্স মানে শুধু টিকে থাকা নয়, বরং এমন ব্যবস্থা গড়া যা প্রতিনিয়ত শিখতে, পরিবর্তন করতে  এবং উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে সক্ষম।”

দিনব্যাপী সামিটের আলোচনা গুলো অনুষ্ঠিত হয় ৩টি কিনোট সেশন, ৩টি প্যানেল ডিসকাশন এবং ১টি ইনসাইট সেশনের সমন্বয়ে।

কিনোট আলোচনায় অধ্যাপক এ কে এনামুল হক টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ও আর্থিক ভিত্তি নিয়ে বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন। এরপর ইউসুকে তাচিকাওয়া, ফাউন্ডার অ্যান্ড ডিজাইন স্ট্র্যাটেজিস্ট, নসাইনার; প্রফেসর, কেইও ইউনিভার্সিটি আলোচনা করেন কীভাবে সৃজনশীল নেতৃত্ব শুধু সংকট মোকাবিলা নয়, বরং রেজিলিয়েন্স তৈরি করে ভবিষ্যতকে শক্ত ভিত্তি দিতে পারে। শেষ কিনোট সেশনে প্রফেসর অ্যান্ড্রু কার্ল ডেলিয়স, প্রোভোস্ট’স চেয়ার অ্যান্ড ভাইস ডিন, বিজনেস স্কুল, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাস্তবতায় উদীয়মান অর্থনীতির জন্য কোন ধরনের নেতৃত্ব কার্যকর হতে পারে, সে বিষয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করেন।

কিনোট বক্তব্যে অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, শুধু প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট নয় — স্থিতিশীল অগ্রগতির জন্য নেতৃত্ব, প্রতিষ্ঠান ও পরিকল্পনার সমন্বিত উন্নতি জরুরি। তার মতে, উন্নয়ন টিকিয়ে রাখতে শক্তিশালী নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান আরও বেশি প্রয়োজন, যাতে পুঁজি দেশে থাকে এবং প্রবৃদ্ধি টেকসই হয়। এছাড়া তিনি পরিবেশ ও নগর পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বৈজ্ঞানিক কৃষি চর্চা, দক্ষ নগর পরিবহন ব্যবস্থা এবং ভূমির সঠিক ব্যবহার জাতীয় রেজিলিয়েন্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি উল্লেখ করেন, “রেজিলিয়েন্স তখনই তৈরি হয় যখন নেতৃত্ব, প্রতিষ্ঠান এবং পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে এগোয় — প্রতিক্রিয়া হিসেবে নয়, পরিকল্পনা হিসেবে।”

 

প্যানেল ও ইনসাইট আলোচনায় উঠে আসে—আর্থিক শৃঙ্খলা, অস্থির সময়ে নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির জন্য দৃঢ় সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার বিভিন্ন প্রকল্প ও ব্যবহারিক দিকসমূহ।  আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল করপোরেট একাউন্টেবিলিটি, গভর্নেন্স, ডেটাভিত্তিক সিদ্ধান্ত, অভ্যন্তরীণ টিম রেজিলিয়েন্স এবং দায়বদ্ধ করপোরেট আচরণ বিষয়ক আলোচনাসমূহ।

সামিটের অন্যান্য সেশনে বক্তা হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, রুহুল কুদ্দুস খান, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড; জোহান বুস, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেড;  মোহাম্মদ এনামুল হক, ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড কান্ট্রি চিফ রিস্ক অফিসার, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক; বিজয় কুমার সাহা, লিড ইনভেস্টমেন্ট অফিসার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক; শেহজাদ মুনিম, ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর, লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড; প্রফেসর ড. সৈয়দ ফেরহাত আনোয়ার, ভাইস-চ্যান্সেলর, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি; সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি.; প্রফেসর ইমরান রহমান, প্রফেসর, স্কুল অফ বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব); আব্দুল্লাহ হিল নাকিব, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, টিম গ্রুপ; প্রমুখ।

লিডারশিপ সামিট ২০২৫ এর পরিবেশনায় ছিল মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, সঞ্চালনায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিট – বাংলাদেশ (এআইইউবি) ও ইউনাইটেড গ্রুপ। সহযোগিতায় টুয়েলভ ক্লোদিং। অফিশিয়াল ক্যারিয়ার পার্টনার—টার্কিশ এয়ারলাইনস; নলেজ পার্টনার—মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এমএসবি); ভেন্যু পার্টনার—ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টার; লার্নিং পার্টনার — কাজী কনসালট্যান্টস; পিআর পার্টনার—ব্যাকপেজ পিআর ও একাডেমিক পার্টনার—লিডারশিপ একাডেমি। সামিটটি বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের উদ্যোগ।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।