সিনিউজ ডেস্ক: হুয়াওয়ে সম্প্রতি ‘ইন্টেলিজেন্ট ওয়ার্ল্ড ২০৩৫ রিপোর্ট’ ও ‘গ্লোবাল ডিজিটালাইজেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ইনডেক্স ২০২৫ রিপোর্ট’ শীর্ষক দুইটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে আগামী ১০ বছরে সম্ভাব্য কিছু বড় প্রযুক্তিগত পরিবর্তন অর্থাৎ মেগাট্রেন্ড উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, উৎপাদন শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন শিল্পে প্রযুক্তিগুলির প্রভাব নিয়েও এতে আলোচনা করা হয়েছে।
হুয়াওয়ের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অব দ্য বোর্ড ডেভিড ওয়াং বলেন, “সভ্যতার প্রতিটি অগ্রগতি এসেছে প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানের হাত ধরে। অনুসন্ধানের প্রবণতা মানবজাতির স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। এটি আমাদের জ্ঞান ও প্রযুক্তির সীমানা বিস্তৃত করতে অনুপ্রাণিত করে। আর আজ সেই প্রেরণাই আমাদের আরও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জেনারেটিভ এআই এমন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে, যা আমরা আগে কল্পনাও করতে পারিনি। তাই আমাদের অবশ্যই ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে এবং নতুন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণা গড়ে তুলতে হবে।”
গত দুই বছরে হুয়াওয়ের গবেষণা দল বিশ্বজুড়ে ২০০–এরও বেশি কর্মশালা আয়োজন করেছে এবং ১০০–এরও বেশি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, গ্রাহক ও অংশীদারের সঙ্গে গভীর পর্যালোচনা করেছে। এর ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে ’ইন্টেলিজেন্ট ওয়ার্ল্ড ২০৩৫ রিপোর্ট’। জাতিসংঘ ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতো বিশ্বস্ত উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তৈরি এই রিপোর্টে ১০টি প্রযুক্তির মেগাট্রেন্ড উল্লেখ করা হয়েছে, যা হুয়াওয়ের মতে আগামী দশকে বুদ্ধিবৃত্তিক রূপান্তরকে পরিচালিত করবে।
মেগাট্রেন্ড ১: কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) এই রূপান্তরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হবে। এর জন্য কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তাকে বাস্তব প্রয়োগের সাথে একীভূত করা প্রয়োজন। কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তার ফলে অভূতপূর্ব প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্ভব হবে।
মেগাট্রেন্ড ২: লার্জ মডেলগুলি (বড় পরিসরের এ্আই মডেল) বিকাশের সাথে সাথে এআই এজেন্ট সাধারণ কাজের মাধ্যম থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহযোগীতে পরিণত হবে এবং বিভিন্ন শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
মেগাট্রেন্ড ৩: হিউম্যান-এআই প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট নতুন রূপ পাবে। এর ফলে মানুষ উচ্চ পর্যায়ের ডিজাইন এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনার উপর বেশি মনোযোগ দিতে পারবে। অন্যদিকে, এআই একই ধরনের কোডিংয়ের কাজগুলি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করবে।
মেগাট্রেন্ড ৪: মানুষ ও কম্পিউটারের মধ্যকার যোগাযোগ পর্যায়ক্রমে গ্রাফিক্সভিত্তিক ইন্টারফেস থেকে সাধারণ ভাষা ও মাল্টিমোডাল (বহুমুখী) ইন্টারফেস ভিত্তিক হয়ে উঠবে। এর ফলে সম্পূর্ণ ইন্দ্রিয়গত অভিজ্ঞতা পাওয়া সম্ভব হবে। ইন্টারফেসগুলো ব্যবহারকারীর কণ্ঠ, অঙ্গভঙ্গিসহ নানা উপায়ে ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ করে দেবে।
মেগাট্রেন্ড ৫: মোবাইল অ্যাপগুলি আলাদা ইউনিট হিসেবে কাজ না করে এআই এজেন্টের মাধ্যমে বড় একটি সিস্টেমের অংশ হিসেবে কাজ করবে। এর ফলে এআই এজেন্টগুলি শুধু ব্যবহারকারীর কমান্ড নিয়েই অন্যান্য সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবে।
মেগাট্রেন্ড ৬: ওয়ার্ল্ড মডেলের (বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে সক্ষম) মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির অগ্রগতি লেভেল ফোর বা আরও উচ্চ স্তরের স্বয়ংক্রিয় যানবাহন তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। এই যানবাহন মোবাইল থার্ড স্পেস (শুধু যাতায়াত নয়, বরং বসে কাজ করা, বিশ্রাম নেওয়া বা সময় কাটানোর জন্য ব্যবহার করা যায়) হিসেবে কাজ করবে ।
মেগাট্রেন্ড ৭: ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কম্পিউটিং ক্ষমতা ভন নিউম্যান আর্কিটেকচারের (আধুনিক কম্পিউটারের মূল ডিজাইন) সীমা পেরিয়ে ১,০০,০০০ গুণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে কম্পিউটিং ইকোসিস্টেম নতুনভাবে গড়ে উঠবে। যে চারটি মূল ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উদ্ভাবন ঘটবে সেগুলি হলো: সেমিকন্ডাক্টরের উপকরণ ও ডিভাইস, প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রযুক্তি, কম্পিউটিং আর্কিটেকচার এবং কম্পিউটিং প্যারাডাইম।
মেগাট্রেন্ড ৮: এজেন্টিক এআই ডেটা স্টোরেজের ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনবে, কারণ ২০২৫ সালের তুলনায় এআই স্টোরেজের চাহিদা ৫০০ গুণ বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের মোট স্টোরেজের ৭০ শতাংশ হবে এআই স্টোরেজ।
মেগাট্রেন্ড ৯: নয়শো কোটি মানুষ নয়শো বিলিয়ন এজেন্টের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এর ফলে মোবাইল ইন্টারনেট এজেন্টিক ইন্টারনেটে (এআই এজেন্টের স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতাযুক্ত) রূপান্তরিত হবে।
মেগাট্রেন্ড ১০: ২০৩৫ সালের মধ্যে গ্লোবাল ডেটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুতের ব্যবহার প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন কিলোওয়াট-আওয়ার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, নতুন এনার্জি সিস্টেমে এআই পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত শক্তির চাহিদা এর দ্রুত প্রসারকে বাধাগ্রস্ত করবে। এই পরিবর্তনের কারণে ২০৩৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক পর্যায়ে ব্যবহৃত শক্তির মিশ্রণে বায়ু ও সৌর শক্তির অংশ হবে ৫০ শতাংশ।
‘ইন্টেলিজেন্ট ওয়ার্ল্ড ২০৩৫ রিপোর্টে’ ২০৩৫ সালের মধ্যে এআই কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবন, ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও পরিবেশে ব্যবহৃত হবে তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এআই সক্রিয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ৮০ শতাংশের বেশি দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে এবং চীনের ৯০ শতাংশের বেশি বাড়িতে বুদ্ধিমান রোবট থাকবে।
হুয়াওয়ে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান এবং আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করে গ্লোবাল ডিজিটালাইজেশন ইনডেক্সকে (জিডিআই) নতুনভাবে প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের আইসিটি শিল্পের কার্যকারিতা পরিমাপ করা হয়। নতুন এই গ্লোবাল ডিজিটালাইজেশন এবং ইন্টেলিজেন্স ইনডেক্সে (জিডিআইআই) নতুন কিছু অর্থনৈতিক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে ডিজিটাল অর্থনীতির মাধ্যমে এআইয়ের সুবিধা নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।
রিপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এখানে: https://www.huawei.com/en/intelligent-world.