সিনিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সংরক্ষণ ও সরবরাহ আরও সহজ করার লক্ষ্যে হুয়াওয়ে একটি উন্নত এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম নিয়ে এসেছে। ঢাকায় হুয়াওয়ে বাংলাদেশ একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ‘হুয়াওয়ে ডিজিটাল পাওয়ার পার্টনার সামিট ২০২৫’-এ হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়া ডিজিটাল পাওয়ার বিজনেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নি জিয়াওপেং (লিয়াম) এই নতুন ইএসএস সিস্টেমটি দেশের বাজারে উন্মোচন করেন।
বাংলাদেশে বিদ্যুতের যে ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করতে সৌরবিদ্যুতের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে অনেক সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে সৌরবিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সৌরপ্রকল্পগুলোতে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। হুয়াওয়ের এই নতুন ইএসএস সিস্টেম লুনা ২০০০-২১৫ সমস্যাগুলো দূর করবে।
হুয়াওয়ের উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন এই নতুন এন+১ জেনারেশন লিকুইড অ্যান্ড এয়ার ইন্টেলিজেন্ট কুলিং এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেমটি (ইএসএস) বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটি অন-গ্রিড ও অফ-গ্রিড – উভয় মোডেই কাজ করতে সক্ষম। কোনো ধরনের বিভ্রাট দেখা দিলে এটি নির্বিঘ্নে অফ-গ্রিড মোড চালু করে গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করবে। এছাড়া এতে অন-গ্রিড অপারেশনের সময় ব্যাকআপ পাওয়ার সিকিউরিটি অপারেশন্স সেন্টার (এসওসি) সেট করে অফ-গ্রিডে জরুরি সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করা যায়।
দক্ষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও উন্নত হাইব্রিড কুলিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে সিস্টেমটি ৯১.৩ শতাংশ রাউন্ড-ট্রিপের কার্যকারিতা প্রদানে সক্ষম। এর প্যাক-লেভেল অপ্টিমাইজেশন ২.০ সিস্টেম চার্জ ও ডিসচার্জের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই রিয়েল-টাইম অ্যাকটিভ ব্যালান্সিং করতে পারে। ফলে সামগ্রিকভাবে ব্যবহারযোগ্য শক্তির পরিমাণ ২% বৃদ্ধি পায়।
অনুষ্ঠানে শিল্পখাতে হুয়াওয়ের সহযোগিদের উপস্থিতিতে পণ্যটি উন্মোচন করা হয়। এছাড়া তাঁরা মত বিনিময় ও কৌশলগত সহযোগিতার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন। বিভিন্ন ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রোকিওরমেন্ট ও কন্সট্রাকশন) প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হুয়াওয়ের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তাগণ। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উ জি (জেসন), হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়া ডিজিটাল পাওয়ার বিজনেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নি জিয়াওপেং (লিয়াম) এবং হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়া ডিজিটাল পাওয়ার পার্টনার বিজনেসের ডিরেক্টর রেন জিয়ান্যু (জ্যামিসন)।
নি জিয়াওপেং বলেন, “আমাদের নতুন এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেমটি বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর দক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্মোচন করা হয়েছে। এর ফলে কম খরচে আরও বেশি নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। ‘হুয়াওয়ে ডিজিটাল পাওয়ার পার্টনার সামিট ২০২৫’-এর মাধ্যমে আমরা এমন একটি সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই, যা বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারকে ত্বরান্বিত করবে।”
হুয়াওয়ের একটি সহযোগী ইপিসি প্রতিষ্ঠান কিংসান বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি হেড মো. রাশেদুল করিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সৌরশক্তি খাতে হুয়াওয়ের নতুন এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম বড় পরিবর্তন আনবে। এটি যেমন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর দক্ষতা ও জ্বালানি ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়াবে, তেমন আমাদের মতো ইপিসি প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহকদের বাড়তি সুবিধা দিতে সাহায্য করবে। স্মার্ট ও নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা আরও দক্ষতার সাথে প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি দেশে নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং আধুনিক শক্তি নিশ্চিত করতে পারবো।”
বাংলাদেশ সরকার নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদনে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নির্ধারণ করেছে। হুয়াওয়ে এই খাতে বাংলাদেশের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি সহযোগী। ২০২১ সাল থেকে হুয়াওয়ে দেশে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্প এবং ভোলার মনপুরা উপজেলায় দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ মাইক্রোগ্রিড, যার সক্ষমতা ২২ মেগাওয়াট। শুধু ২০২৩ সালেই হুয়াওয়ে সফলভাবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৭২টিরও বেশি সোলার রুফটপ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ৫টি নতুন ডিজিটাল পাওয়ার পণ্য বাজারে নিয়ে আসে। নতুন এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেমটি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হুয়াওয়ের দ্বিতীয় ইএসএস সল্যুশন।