সিনিউজ ডেস্ক: আজকের ডিজিটাল যুগে, তরুণরা স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্রমাগত সংযুক্ত হচ্ছে, যা বাবা-মা, শিক্ষক এবং প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। ইন্টারনেট, যেখানে শিক্ষা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধির সুযোগ দেয়, সেখানে সাইবার বুলিং, অপ্রাসঙ্গিক কনটেন্ট, গোপনীয়তা লঙ্ঘন, এবং অনলাইন শিকারী র মতো বিপদও রয়েছে। তাই, তরুণদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বাড়ানোর সাথে সাথে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঝুঁকি বোঝা
টিনএজাররা সাধারণত প্রতিদিন টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের এর মতো প্ল্যাটফর্মে সময় কাটায়, যা তাদের বিভিন্ন অনলাইন ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে সাইবারবুলিং এবং ক্ষতিকারক কনটেন্টে এক্সপোজারের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। অনলাইনে অজান্তে শেয়ার করা ব্যক্তিগত তথ্য বা পরিচয় চুরিরও সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারণে, অভিভাবকদের সন্তানদের অনলাইন অভিজ্ঞতার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়া জরুরি। ইন্টারনেটের গোপনীয়তা কিছু মানুষকে ক্ষতিকর আচরণে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, যার ফলে টিনএজারের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আরেকটি ঝুঁকি হল ব্যক্তিগত ডেটার অপব্যবহার, যেখানে টিনএজাররা অজান্তেই সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করে ফেলে, যা তাদের প্রাইভেসি বা পরিচয় চুরির ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এই কারণে, বাবা-মা এবং অভিভাবকদের সন্তানের অনলাইন অভিজ্ঞতাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এবং স্বচ্ছতা
অনলাইন নিরাপত্তা বজায় রাখতে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো প্যারেন্টাল কন্ট্রোল টুলস তৈরি করছে। টিকটক এর ‘ফ্যামিলি পেয়ারিং’ টুলের মতো ফিচার অভিভাবকদের সন্তানদের স্ক্রিন টাইম ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া, রিপোর্টিং এবং অ্যালার্ট সিস্টেমগুলো ব্যবহারকারীদের অশালীন কনটেন্ট বা আচরণ জানাতে সুযোগ দেয়। টিকটক ব্যবহারকারীরা কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘনকারী কনটেন্ট সম্পর্কে বিশ্বস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের জানাতে পারেন, যা তরুণদের ক্ষতিকর পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষা পেতে সহায়তা করে।
মানসিক সুস্থতায় সমর্থন
নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের বাইরে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো মানসিক সুস্থতা প্রচারে গুরুত্ব দেয়। যেমন, বিরতি নেওয়ার রিমাইন্ডার বা রাতে শোয়ার আগে লগ আউট করার প্রম্পট ব্যবহারকারীদের সুস্থ ডিজিটাল অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রযুক্তির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শিক্ষা ও সহযোগিতা
অনলাইন নিরাপত্তায় প্রযুক্তির পাশাপাশি শিক্ষা-ও সমানভাবে জরুরি। অভিভাবক ও শিক্ষকদের উচিত তরুণদের শেখানো কীভাবে ইন্টারনেটে দায়িত্বশীলভাবে চলাফেরা করতে হয় — যেমন অশালীন কনটেন্ট চিনে নেওয়া, অতিরিক্ত তথ্য শেয়ার না করা, বা প্রাইভেসি সেটিংস বোঝা।
এজন্য স্কুলে ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রোগ্রামও জনপ্রিয় হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও সচেতনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার শেখায়। পাশাপাশি, অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানের অনলাইন অভ্যাস নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা, নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা ঠিক করা, আর তারা কোন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে তা জানার চেষ্টা করা — যাতে তৈরি হয় একসাথে নিরাপদ ডিজিটাল অভিজ্ঞতা।
তরুণদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রযুক্তি কোম্পানির মিলিত উদ্যোগ জরুরি। প্রযুক্তিগত টুলের পাশাপাশি যত্নশীলদের সক্রিয় ভূমিকা তরুণদের সুরক্ষিত রাখতে পারে। ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো, সচেতনতা তৈরি এবং খোলামেলা আলোচনা চালু রাখার মাধ্যমে আমরা তরুণদের জন্য ইন্টারনেটকে আরও নিরাপদ, দায়িত্বশীল এবং ইতিবাচক জায়গা করে তুলতে পারি।