টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক এফবিসিসিআই এর স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা

সিনিউজ ডেস্ক: টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক  দেশের বাজারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স খাতের দেশীয় শিল্পকে এগিয়ে নিতে “ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স মার্চেন্ডাইজ” বিষয়ক এফবিসিসিআই (FBCCI) এর স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ১৪ মে এফবিসিসিআই-এর র্কাযালয়ে র্বোড রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সম্মানিত সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

 

সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, একসময় ইলেকট্রিক্যাল পণ্য আমদানি করতে হতো আমাদের। এখন প্রায় ৮০ শতাংশই দেশে তৈরি হয়। ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস খাতের প্রসারের জন্য কমপ্লায়েন্স একটি বড় ইস্যু। মানসম্মত পণ্য তৈরি করতে পারলে বিশ্ববাজারে ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের বাজার ধরা সম্ভব।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ছোট-বড় সব কোম্পানিই দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। ছোট ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে সরকারও যথেষ্ট নিরাপত্তা দিচ্ছে। তাদের জন্য নীতিমালা তৈরিতে সহযোগিতা করতে হবে আমাদের। শুধু নিজস্ব ব্যবসার উন্নতি হিসাব না করে পুরো খাতের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এ সময় ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠায় জোর দিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ইলেকট্রিক্যালসহ যেসব খাতের পণ্য দেশের বাইরে রফতানি করে রাজস্ব আয় করা সম্ভব, সেসব খাতকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে।

সভায় ডিরেক্টর-ইন-চার্জ হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য পেশ করেন এফবিসিসিআই এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব এম এ রাজ্জাক খান রাজ। তিনি বলেন, ব্যাংক,বীমা,স্টিল,গার্মেন্টস, চামড়াসহ প্রায় সব খাতে নীতিমালা থাকলেও ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস খাতের উন্নয়নে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতমালা নেই। ফলে দেশের অল্প কিছু কোম্পানি (যারা বজার নিয়ন্ত্রণ করছে)  ছাড়া বেশির ভাগই মন্দা অবস্থায় আছে। ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে তারা ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবে। ফলে ব্যাংক ও উদ্যোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

 

তিনি আরো বলেন,’’ ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস টেকসই উন্নয়ন খাতের উন্নয়নে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের সুবিধা বাড়ানো আবশ্যক ।”

 

স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাব্বাত উল্লাহ।তার বক্তব্যে ইলেকট্রনিকস খাতে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতির বিষয়টি উল্লেখ করেন। এজন্য তিনি নিজ উদ্যোগে এ খাতের ডাটাব্যাংক তৈরি করে এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে সরকারের কাছে পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানান।

 

উক্ত বৈঠকে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স খাত নিয়ে অনেক সময় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়। শুধু কয়েকটি বড় কোম্পানি নয়, ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলোও যাতে বাঁচতে পারে, উন্নতি করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয় এবং এ খাতের উন্নয়ন, ঋণ পুনরুদ্ধার (Credit Recovery), রপ্তানি (Export) ও স্থানীয় মার্কেট এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের টেকসই উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়।

 

 

বক্তাগন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ” দেশের দুই-  একটি বড় কোম্পনীর অগ্রাসী মনোভাব, হটকারী  ববসায়ীক নীতি বিশেষ করে দেশের একটি  বড় কোম্পানী “ওয়ালটন গ্রুপ” তারা বাজারে বিশাল অংকের বাকী দিচ্ছে, অগ্রাসী বাজারজাতকরণ নীতি অনুসরণ করছে এবং তারা এককভাবে বাজার নিয়ন্ত্রন করবার চেস্টা করছে। অপর দিকে ছোট ও মাঝারি ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্প উদ্যোক্তগন বাজারে বিপুল পরিমাণ বাকী টাকা তুলতে ব্যর্থ হয়, ব্যাংক লোন পরিশোধ না করতে পারায় ঋন ক্ষেরাপীতে পরিনত হয়, কেউ কেউ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছেন।ফলে এ  সকল ছোট ও মাঝারি ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্প ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।’’

 

“ওয়ালটন গ্রুপ” এর অগ্রাসী ও হটকারী ববসায়ীক নীতির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় এবং এধরনের নীতি নিয়ন্ত্রনে সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়।

এ সভায় ছোট ও মাঝারি ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্প রক্ষা ও উন্নয়নে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং এ সংক্তান্ত যথাযথ পদ্ধতি প্রনয়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের প্রতি অহ্বান করা হয়।

 

বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি ও কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. সোহেল খান সরকারের কাছে এ খাতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের সুবিধাসহ টেলিভিশন প্রস্তুতে আলাদা শিল্পাঞ্চলের দাবি জানান।

 

এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ও কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী ইকবাল জানান, গবেষণা ও যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত না থাকার কারণে বাংলাদেশে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস খাতের লক্ষণীয় প্রসার হচ্ছে না। এ খাতের উন্নয়নে সামগ্রিক ম্যাপিং করে কাজ করা দরকার।

 

সভায় নিরাপত্তা সরঞ্জাম তৈরিতে সরকারের প্রণোদনা পাওয়া, সরকারি প্রকল্পে দেশীয় কেবলের ব্যবহার বাড়ানো, দুবাই বা আফ্রিকায় ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের হাব তৈরি করা, এ খাতে সরকারের ১৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন কমিটির অন্য সদস্যরা।

 

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি এমএ মোমেন, মো. আমিন হেলালী, পরিচালক হাফেজ হারুন, সাবেক পরিচালক খন্দকার রুহুল আমীন, কমিটির কো-চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান ও সালাউদ্দিন ইউসুফ এবং এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মোহাম্মাদ মাহফুজুল হক প্রমুখ।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।