সিনিউজ ডেস্ক: দেশের গণতন্ত্রে নারী ও তরুণ সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থায়নে, এবং জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের আয়োজনে “একান্নর জাগরণ (The Rise of 51)” শীর্ষক প্রচারণার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউরোপিয়ান পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসি (ইপিডি)-এর সহায়তায় পরিচালিত এহেড বাংলাদেশ প্রজেক্ট-এর অধীনে এই প্রচারণাটি আয়োজন করা হয়। আজ রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোর গ্র্যান্ডের লা ভিতা হলে এটি অনুষ্ঠিত হয়। দেশের রাজনৈতিক দল, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।
“একান্নর জাগরণ” শীর্ষকটির মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ, অর্থাৎ নারী সমাজকে তুলে ধরা হয়েছে। ক্যাম্পেইনটির মূল উদ্দেশ্য হলো এই বৃহৎ নারী জনগোষ্ঠী এবং তরুণ সমাজের নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি, নেতৃত্ব বিকাশ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
প্রকল্পের আওতায় নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের হার বাড়ানো, প্রথমবারের ভোটারদের সচেতন করা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে গণতন্ত্রের মূল স্রোতে নিয়ে আসার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশজুড়ে ৮টি বিভাগে ৬০০ যুব নেতাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং ৭,০০০ তরুণ-তরুণীর জন্য নাগরিক সচেতনতা সেশন আয়োজনের কাজ চলছে। পাশাপাশি, সহজে ভোটার তথ্য ও শিক্ষণ সহযোগিতা প্রদানের জন্য চালু করা হয়েছে একটি এআই-চালিত নাগরিক শিক্ষা হোয়াটসঅ্যাপ বট।
অনুষ্ঠানে “বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক ও আধুনিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা” শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বিশিষ্ট বক্তারা তাদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন ।
আনাস্তাসিয়া এস. উইবাওয়া, প্রতিনিধি, European Partnership for Democracy (EPD) বলেন, “গণতন্ত্র তখনই বিকাশ লাভ করে যখন প্রতিটি নাগরিক নিজেদের দৃশ্যমান, ও প্রতিনিধিত্বশীল মনে করেন। AHEAD Bangladesh Project এবং ‘একান্নর জাগরণ’ ক্যাম্পেইন উদ্যোগটি তরুণ ও নারীদের নাগরিক জ্ঞান ও আস্থা নিশ্চিত করার একটি প্রয়াস।”
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (UPL)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মাহরুখ মহিউদ্দিনর মতে, “দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামোয় নারীর সীমিত উপস্থিতি এবং ভোটার পর্যায়ে সচেতনতার অভাব—এই দুটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশন ও সুশীল সমাজকে নারীর ভোট ও অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। “
প্রথমবারের মতো ভোটার ও তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণকারী যুনায়রা ইসলাম নুবা, রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আস্থার অভাবের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আস্থা ফিরিয়ে আনতে দলগুলোকে অবশ্যই তাদের কাঠামো ও মনোভাব সংস্কার করতে হবে। আমরা এমন রাজনৈতিক সংগঠন চাই যা যুব-বান্ধব, যারা আমাদের কথা শোনে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।”
কামরুল কিবরিয়া অয়ন, সিনিয়র ম্যানেজার, প্রোগ্রাম, জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট বলেন “একান্নর জাগরণ” নারী ও যুব সমাজের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করার এক আন্দোলন। আমাদের লক্ষ্য হলো দেশের ৫১ শতাংশ নারী ও তরুনদের ভোটাধিকার এবং নেতৃত্বে জাগ্রত করা। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে কাঠামোগত সংস্কার আনতে হবে, প্রথমবার ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।”
