ইন্টারনেট সার্ভিসকে তথ্যপ্রযুক্তি সেবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

সিনিউজ ডেস্ক: ইন্টারনেট সার্ভিসকে তথ্যপ্রযুক্তি সেবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট আগামী মাসে ঘোষণা করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সবার জীবন তথা স্বাস্থ্য এবং জীবিকা তথা অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এক অস্বাভাবিক, অসাধারণ, অস্থির, অনিশ্চিত, বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যা এখনো চলমান।

 

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (BMCCI) সভাপতি ও বেসিসের প্রাক্তন সভাপতি জনাব সৈয়দ আলমাস কবীর এ প্রসঙ্গে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সহজ ও ব্যবসাবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা, আয়কর ও মূল্যসংযোজন করের আওতা বৃদ্ধি, আয়কর সংগ্রহে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, কর ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অটোমেশন, রপ্তানী বহুমুখীকরণ ও স্থানীয় শিল্পায়ন উৎসাহিতকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

 

তিনি বলেন, কোভিড মহামারীর কারণে সৃষ্ট সীমাবদ্ধতার ফলে বিগত দুই বছরের পর বাংলাদেশ এবং বিশ্ব অর্থনীতি এখন পুরোদমে সচল হয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখনই মোক্ষম সময়। একই সাথে বাহ্যিক বৈশ্বিক ঘটনাবলি, ইউরোপীয় অর্থনীতিতে শক্তির বাজারে সম্ভাব্য অস্থিরতা এবং রাশিয়ান এবং ইউক্রেন দ্বন্দ্বের কারণে বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের স্থানীয় অর্থনীতিও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির চাপ, লজিস্টিক এবং সাপ্লাই চেইন ব্যাঘাতের মোকাবেলা করছে। আগামী বাজেটে এই ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রতিফলন থাকা আবশ্যক।

 

তিনি শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, দুটি অর্থনীতি ভিন্ন, এবং রপ্তানি ও উন্নয়নের গতিপথ ভিন্ন। আমাদের বৈদেশিক ঋণ কম যা আমাদের জিডিপির প্রায় ১৭%। আমাদের রপ্তানি ও আমদানি রেমিট্যান্স বনাম আমাদের আমদানি এবং ঋণ পরিশোধের মতো বহির্মুখী রেমিট্যান্সের মধ্যে ব্যবধান মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা আমরা ভ্যাকসিনের জন্য ব্যয় করেছি। তাই এসবের সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের জন্যও জনাব আলমাস কবীরের মতে আসন্ন বাজেট বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

জনাব আলমাস কবীর জানান, আমাদের দেশে ট্যাক্স প্রদানকারীর সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। ট্যাক্সের হার বৃদ্ধি না করে ট্যাক্স প্রদানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত। ট্যাক্স নেটের আওতা যত বাড়বে উচ্চ ট্যাক্স হার ধার্য করার প্রয়োজন পড়বে না। একই সঙ্গে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল পদ্ধতিকে আরও জনপ্রিয় করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো দরকার।

 

আসন্ন বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য মালয়েশিয়া চেম্বারের প্রস্তাবনাঃ

  • এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে সঠিক প্রস্তুতির অভাবে আমাদের রপ্তানিতে এর প্রভাব নেতিবাচক হতে পারে। রপ্তানি আয় বাড়াতে বিভিন্ন প্রণোদনা অব্যাহত রাখা।
  • রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাত যেনো তৈরি পোশাক শিল্পের মতো নিয়মিত বন্ডেড সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করা।
  • পরিবেশবান্ধব বা সবুজ শিল্পায়নে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এনবিআর সাধারণ কারখানা ও পরিবেশবান্ধব শিল্পের মধ্যে কর্পোরেট করের ব্যবধান কমপক্ষে ৫ শতাংশ রাখা।
  • জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা অনুযায়ী সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতের কর অব্যাহতির (Tax Exemption) সুবিধা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখা।
  • Internet Services ও Training on IT/ITES কে ITES এর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা
  • বৈদেশিক নির্ভরতা কমাতে ট্যাক্স সমস্যার সমাধান করতে হবে। ব্যক্তি করদাতারা সম্পত্তি কর সঠিকভাবে প্রদর্শন করছেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় বাজেটে কর্পোরেট করের হার এখনও অনেক বেশি যা অবিলম্বে সমাধান করা।
  • ডিজিটাল পেমেন্ট উৎসাহিত করতে ৫% নগদ প্রণোদনা প্রদান করা।
  • এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করা
  • বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কর কাঠামো প্রণয়ন করা। এছাড়া আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিষয়ক অনেক সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ী, ভোক্তা, করদাতা কিংবা রাজস্বের ওপর কী প্রভাব ফেলছে তা বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে সংশোধনমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া ইত্যাদি।
  • স্থানীয় শিল্পের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কী কী সুবিধা দেয়া উচিত তা নির্ধারণ করে ট্যারিফ পলিসি দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
  • হোল্ডিং ট্যাক্স প্রক্রিয়ায় ই-টিন বাধ্যতামূলক করা।
  • প্রবাসী আয় বৃদ্ধি অর্থাৎ রেমিট্যান্সের ওপর জোর দেওয়া।
  • আইসিটি সেক্টরে নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে তহবিল গঠণ ও নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্যে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান।
  • সব মন্ত্রণালয় ও তাদের অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর আভ্যন্তরীণ উন্নয়নের জন্য বাজেটের অন্তত ১০% সফটওয়্যার ও আইটিইএস ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা।

 

এছাড়া প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে, এই পাচার রোধে ২০১৩ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং নামে একটি আইন করা হয়েছিল। বাস্তবে এর অগ্রগতি কতটুকু সেটা আমরা জানি না। মুদ্রা পাচার রোধে ভারত অথবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন করা যায় কি না সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে।

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।