সিনিউজ ডেস্ক:জাতীয় ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার বিজয়ী সিগনেচার স্টার্টআপ ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগ জিপি এক্সেলারেটরের সপ্তম ব্যাচকে অনবোর্ড করেছে গ্রামীণফোন। এ নিয়ে আজ (১০ ফেব্রুয়ারি) ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশের প্রথম প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক এক্সেলারেটর প্রোগ্রামের উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এবারের এক্সেলারেটর প্রোগ্রামের লক্ষ্য স্টার্টআপগুলোর জন্য ১০ গুণ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিশ্চিত করা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী, প্রশিক্ষক ও বিনিয়োগকারীগণ।
আইডিএলসি, অ্যাঙ্করলেস ও বাংলাদেশ অ্যাঞ্জেল নেটওয়ার্ক – এ তিন ইনভেস্টমেন্ট পার্টনার নিয়ে স্টার্টআপগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ নিশ্চিতে এ বছর এক্সেলারেটরের কারিকুলাম প্রবৃদ্ধি, বৈশ্বিক বিস্তৃতি ও ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে ডিজাইন করা হয়েছে। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানের ভ্যালুয়েশন, বিনিয়োগ সংগ্রহ, দেশের বাইরে কার্যক্রম সম্প্রসারণে আইনি নথি তৈরিতে সহায়তা এবং ছয় মাসব্যাপী বুটক্যাম্পের মাধ্যমে স্টার্টআপগুলোর ১০ গুণ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সুবিধা প্রদান অব্যাহত রাখবে জিপি এক্সেলারেটর প্রোগ্রাম। এ প্রোগ্রামের লক্ষ্য বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে ব্যবসায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে কার্যক্রম সম্প্রসারণের সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি করা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “বৈচিত্র্যময় ভাবনার সম্ভাবনাময় তরুণরা তাদের সেরাটা দিয়ে ভিন্ন কিছু করছে, এটা দেখাটাও আমাকে আশাবাদী করে তুলছে। এ ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের এ চেতনার প্রকাশই দরকার। আমি জিপি এক্সেলারেটর ব্যাচ ৭ এর সকল স্টার্টআপকে অভিনন্দন জানাই। আর পাশাপাশি, এমন চমৎকার উদ্যোগ নিয়ে কাজ করার জন্য গ্রামীণফোনকেও ধন্যবাদ।”
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, “সম্প্রতি, গ্রামীণফোন এর ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ ‘জিপি এক্সেলারেটর’ এর মাধ্যমে দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য সম্মানজনক ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২১’ অর্জন করেছে। এ ধরনের স্বীকৃতি স্ব-নির্ভর ও জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে।” তিনি আরও বলেন, “সমাজের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি এবং জাতির ক্ষমতায়নে কথা পুনর্ব্যক্ত করে আমি বলতে চাই, গ্রামীণফোন তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করাতে বিশ্বাস করে, ডিজিটাল উদ্যোক্তার মানসিকতা তৈরিতে এবং বৈশ্বিক পরিসরে তাদের চিন্তা করতে সহায়তায় বিশ্বাস করে। পাশাপাশি, ইন্ডাস্ট্রি-ফার্স্ট এ ধরনের পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে তরুণদের আপস্কিল ও রিস্কিল করে ভবিষ্যতের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সম্ভাবনাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পরিণত করে সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ উন্মোচনেও বিশ্বাস করে গ্রামীণফোন।”
এর আগে ২০২১ সালে, কোভিড-১৯ এর সময়ে তৈরি হওয়া ‘গ্লোবাল-ফার্স্ট’ বাংলাদেশি স্টার্টআপগুলোকে জিপি এক্সেলারেটর প্রোগ্রামের মাধ্যমে সহায়তায় দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের অগ্রণী তিন স্টার্টআপ – বেটারস্টোরিজ লিমিটেড, লাইটকাসল পার্টনারস ও আপস্কিলের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে গ্রামীণফোন।
২০১৫ সালে যাত্রার শুরু থেকে জিপি এক্সেলারেটর প্রোগ্রাম দেশের সম্ভাবনাময় স্টার্টআপ, ডেভেলপার ও উদ্ভাবকদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, তাদের কৌশল ও অবকাঠামোগত রিসোর্স দিয়ে সহায়তা করছে। একটি কারিকুলাম ভিত্তিক কৌশলের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোকে ফান্ডিং, বিশেষজ্ঞ মেন্টরশিপ, গ্রামীণফোনের রিসোর্স ব্যবহারের সুযোগ এবং বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগ সহ নানাভাবে স্টার্টআপগুলোকে সহায়তায় গ্রামীণফোন জিপি এক্সেলারেটরের এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এ বছর যেসব স্টার্টআপ জিপি এক্সেলারেটর ৭ ব্যাচের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করার সুযোগ পাবে, তারা হলো: এয়ারডব্লিউআরকে, সমন্বিত পেমেন্ট সিস্টেম, প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ও সংক্ষিপ্ত পেমেন্ট সাইকেলের সুবিধা সহ বাংলাদেশি সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য ইনভাইট-ওনলি গ্লোবাল ট্যালেন্ট মার্কেটপ্লেস; গেমঅফ১১, ফ্যান্টাসি গেমিং প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণকারীরা খেলা নিয়ে তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করে প্রতিদিন নানা পুরস্কার জিতে নিতে পারবেন; আইপেজ, মেশিন লার্নিং, ডেটা সায়েন্স ও এআই ব্যবহার করে কৃষক ও এফএমসিজি প্রতিষ্ঠানের বাড়তি আয়ে ভ্যালু-অ্যাডেড ডেটা সেবা দিবে স্টার্টআপটি; লাইল্যাক, নারীদের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধির জন্য একটি সামগ্রিক ডিজিটাল ওয়েলনেস প্ল্যাটফর্ম; ওয়ানথ্রেড, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সল্যুশনটি কাজ ও ফাইল ব্যবস্থাপনায় এবং সহজে ও সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়ে যোগাযোগে সহায়তা করবে এবং অননাউ, উদীয়মান বাজারে বড় রেস্টুরেন্ট চেইনের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে প্রোপ্রায়োটারি ও জনপ্রিয় ভার্চুয়াল ম্যেনু সম্পর্কে ধারণা প্রদান, প্রশিক্ষণ, সাপ্লাই চেইন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করার মাধ্যমে ছয় লাখের বেশি এসএমই রেস্টুরেন্টের ক্ষমতায়নে সহায়তার লক্ষ্য রয়েছে এ ইন্টারনেট রেস্টুরেন্ট প্ল্যাটফর্মটির।
এখন পর্যন্ত জিপি এক্সেলারেটর প্রোগ্রাম ৪৪টি সম্ভাবনাময় স্টার্টআপের অংশগ্রহণে সফলভাবে ছয়টি পর্ব শেষ করেছে। এর মাধ্যমে দেশজুড়ে পাঁচ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এক্সেলারেটরের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণফোন ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। প্রতিটি দলকে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা সমমানের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সম্ভাবনা উন্মোচনে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সেবা এক্সওয়াইজেড, সিমেড হেলথ ও পার্কিংকই এর মতো স্টার্টআপ ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের ভ্যালুয়েশন মার্ক অতিক্রম করেছে। এ প্রোগ্রামের উল্লেখযোগ্য অন্যান্য অ্যালামনাই স্টার্টআপের মধ্যে রয়েছে ঢাকাকাস্ট, ক্র্যামস্ট্যাক ও ডক্টরকই।