সিনিউজ ডেস্ক: প্রস্তাবিত টেলিকম নীতিমালায় ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) বাতিলের প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এই নীতিমালা কার্যকর হলে সরকার বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে যার বিপরীতে সরকার রাজস্ব পাবে ১৭-১৮ কোটি টাকা ,বিদেশি কোম্পানির প্রভাব বাড়বে এবং জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
বৃহস্পতিবার (২৯মে) রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক কর্মশালা শেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তারা। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দে। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
এআইওবি সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আইসিএক্স টেলিকম খাতের ‘তৃতীয় চোখ’। এটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হলে দেশীয় স্বার্থ, রাজস্ব এবং নিরাপত্তা—সবই হুমকির মুখে পড়বে।
আমাদের আছে বিশ্বমানের প্রকৌশলী জানিয়ে তিনি বলেন, এরাই টেলিকম থাতের উন্নয়ন করেছে। কিন্তু এখন এই খাত বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। দেশীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নতুন টেলকো টপোলজি করা হচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় কমবে এবং বেকারত্ব বাড়বে। এমনকি জাতীয় নিরাপত্তা সঙ্কটে পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
এআইওবি কোষাধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) খুরশীদ আলম বলেন, মাত্র চার মাস আগে ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আমরা সর্বাধুনিক টেলিকম প্রযুক্তি স্থাপন করেছি। এখন নতুন টপোলজিতে তা ধ্বংসের মুখে।
অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের আহমেদ-উর রহমান রোমেল জানান, শুধু এসএমএস আদান-প্রদানে সরকার ৭৪ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। জুলাইয়ের পর প্রতিদিন দেশে শত কোটি এসএমএস আইসিএক্স এর মাধ্যমে বিনিময় হয়। এতে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। কোনো টাকাই পাচ্ছে না সরকার। আইসিএক্স এর মাধ্যমে এসএমএস বিনিময় হলে সরকারের আয় হবে ৭৪ কোটি টাকা।
আইসিএক্সের মূল ভূমিকা আন্তর্জাতিক গেটওয়ের (আইজিডব্লিউ) কল দেশের মোবাইল বা অন্যান্য অপারেটরে পৌঁছে দেওয়া, যা ডিজিটাল নজরদারির আওতায় থাকে। এটি গ্রে ট্রাফিক ও অবৈধ কল প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে, ফলে রাজস্ব ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হয়। বর্তমানে ৫০টির বেশি অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক অপারেটর রয়েছে। আইসিএক্স বাদ দিলে আলাদাভাবে সংযোগ স্থাপনে খরচ বাড়বে এবং অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, একটি মোবাইল কলের ২ টাকা ৪০ পয়সার মধ্যে আইসিএক্স পায় মাত্র ৪ পয়সা, যার মধ্যে ২ পয়সা বিটিআরসিকে দিতে হয়। অবশিষ্ট এক পয়সা কোম্পানির হাতে থাকে, যা দিয়ে খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে।
আইসিএক্স সরকারের একটি স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য রাজস্ব উৎস জানিয়ে সেমিনারে বলা হয়, আইসিএক্স থেকে গত ১২ বছরে সরকারের রাজস্ব আয় প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক এসএমএস অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে যা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এখন উন্মুক্ত পথে পরিচালিত হচ্ছে এবং এ কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে আইসিএক্স-এর আয় স্থানান্তরিত হয়ে মোবাইল অপারেটরদের আয়ে যোগ হবে এবং আইসিএক্স তাদের গ্রস রেভিনিউয়ের ৫০ শতাংশ বিটিআরসিকে পরিশোধ করে রেভিনিউ শেয়ার হিসাবে, অথচ মোবাইল অপারেটর পরিশোধ করে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ; কাজেই সরকারি রাজস্ব কমে যাবে।
সেমিনারে বলা হয়, যেখানে অন্যান্য অনেক লাইসেন্স স্তরে সরকারের বিপুল পরিমাণ বকেয়া পাওনা রয়েছে, সেখানে আইসিএক্সের মত কার্যকরী ও নিশ্চিত রাজস্ব উৎসকে বাদ দেওয়া হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এই ধরনের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের রাজস্ব স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
আইসিএক্স লাইসেন্সের ফলে ডেটা সেন্টারসহ ঢাকার বাইরে গড়ে ওঠা অনেক ডেটা সেন্টারের কার্যক্রমের প্রধান সেবাগ্রহীতা আইসিএক্স প্রতিষ্ঠান। আইসিএক্স বন্ধ হলে এসব প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়বে, ফলে বৃহৎ পরিসরে কর্মসংস্থান কমবে। সুতরাং, প্রস্তাবিত পলিসি বাস্তবায়িত হলে ৭০০ লোক চাকরি হারাবে।