ইভিএম কি? যেভাবে কাজ করে ইভিএম
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং (ইভিএম) বাংলাদেশে ভোটগ্রহণের একটি নতুন পদ্ধতি। আর নতুন বলেই একে নিয়ে রয়েছে দ্বিধা-দ্বনদ্ব, সংশয় ও জিজ্ঞাসা। এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে না-জানার প্রশ্নটিও। অনেকেই জানেন না বিষয়টি আসলে কী?
ইলেকট্রনি ভোটিং মেশিন কি?
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) হচ্ছে ভোট প্রদানের একটি সহজতর ব্যবস্থা। মেশিনটিতে একটি পূর্ব-প্রোগ্রামিং করা মাইক্রোচিফ থাকে যা প্রতিটি ভোটের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে হিসাব করে প্রদর্শন করে। এতে ব্যালটকাগজে সিল মারার পরিবর্তে ভোটার পছন্দের প্রতীকের পাশের সুইচ টিপে ভোট দিতে পারেন। প্রতিটি বুথে একটি ইভিএমের প্রয়োজন পড়ে।
ইভিএম কীভাবে কাজ করে?
একটি নির্বাচন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে থাকে ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট। এই ইউনিটের সম্মুখভাগে থাকে ডিজিটাল ডিসপ্লে। বিপরীত দিকে থাকে স্টার্ট সুইচ, ব্যালট সুইচ, মেমোরি রিসেট সুইচ, ফাইনাল রেজাল্ট সুইচ এবং ক্লোজ বাটনসহ আরো কিছু সুইচ। ভোট শুরু করার জন্য স্টার্ট সুইচটি চাপতে হয়। তারপর ব্যালট সুইচটি চেপে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে ভোট দিতে বুথে পাঠান। এই সুইচটি চাপলে বুথের মধ্যে থাকা ইভিএমের অপর অংশ ব্যালট ইউনিটটি একটি ভোট দেয়ার জন্য কার্যকর হয়। ভোট দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার অকার্যকর হয়ে যায় ব্যালট ইউনিটটি, যতক্ষণ না আবার কন্ট্রোল ইউনিটের ব্যালট সুইচ চাপা হচ্ছে। ভোটদান শেষে ভোটার বেরিয়ে গেলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আবার ব্যালট সুইচ চেপে ব্যালট ইউনিটটি কার্যকর করেন। এভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হলে ক্লোজ সুইচটি চাপলেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং ফাইনাল রেজাল্ট সুইচটি কার্যকর হবে। এটি এক এক করে চেপে চললে ব্যালট ইউনিটে সাজানো ক্রমানুযায়ী একের পর এক প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বেরিয়ে আসে।
ইভিএমের অপর অংশ ব্যালট ইউনিটটি রাখা হয় বুথের ভেতর। ভোটার ঢুকে দেখবেন ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে একটি সবুজ বাতি জ্বলছে। অর্থাৎ আপনার ভোট দিন। ব্যালট ইউনিটের ওপর প্রার্থীর নাম ও প্রতীক সাজানো থাকে। প্রত্যেক প্রতীকের পাশে থাকে একটি করে সুইচ। ভোটার তার পছন্দের প্রতীকটির পাশের সুইচটি চাপবেন। ভোটটি গৃহীত হলে ভোটার ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে থাকা লাল বাতিটি জ্বলতে দেখবেন। অর্থাৎ ভোটটি গৃহীত হয়েছে। নতুন ভোটটি গৃহীত হলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে রাখা কন্ট্রোল ইউনিটের সামনের ডিসপ্লেতে একটি ভোট যোগ হবে। এরপর তিনি আবার অন্য কাউকে ভোটদানের অনুমতি দিয়ে বুথে পাঠালে ভোটার গিয়ে ব্যালট ইউনিটে সবুজ বাতি জ্বলতে দেখবেন। এভাবেই চলতে থাকবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশের নির্বাচনে ইভিএম কীভাবে কাজ করে?
ধারাবাহিক গবেষণার মাধ্যমে ইভিএম নিয়ে একটা পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) শাহাদত হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশের নির্বাচনে ইভিএম কীভাবে কাজ করবে তিনি জানান, ট্র্যাডিশনাল যে ভোটিং সিস্টেম তার সাথে মিল রেখেই ইভিএম ডিজাইন করা হয়েছে। সময় এমনভাবে সেট করা তাতে ভোটের দিন আটটার আগে ভোট দেয়া সম্ভব হবে না এবং এতে যে পুরনো কোনো ভোট দেয়া নেই সেটিও এজেন্ট ও অন্যদের দেখিয়ে দেয়ার সুবিধা আছে। ইভিএম অপারেট করার জন্য প্রিজাইডিং বা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের বায়েমেট্রিক্স নেয়া থাকবে, তাই তারা ছাড়া কেউ অপারেট করতে পারবে না। কোনো কারণে মেশিন নষ্ট হলেও প্রদত্ত ভোট নষ্ট হবে না। কোনভাবেই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত নয় তাই হ্যাক করা যাবে না, যেই কেন্দ্রের ইভিএম তা দিয়ে সেই কেন্দ্রেই ভোট দেয়া যাবে।
ভোটার যখন ভোট দিতে আসবে তখন স্মার্ট কার্ড বা পরিচয়পত্র নাম্বার বা ফিঙ্গার প্রিন্টার দিয়ে যাচাই করে তাকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।এর কোন একটি দিয়ে যাচাইয়ের পর ভোটারের ছবি প্রজেক্টরে দেখা যাবে যেটা সব প্রার্থীর এজেন্টরাও দেখতে পাবে এবং এরপর ভোট দানের তিনি গোপন কক্ষে প্রবেশের সুযোগ পাবেন।
ইভিএম কারা তৈরি করছে?
দীর্ঘদিন ধরে বুয়েট ও মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) নানা গবেষণা করছে। এর আগে ইভিএম তৈরিতে সহায়তা করেছে বুয়েটও। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে অনেকদিন ধরেই। বিএমটিএফ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান তাদের মাধ্যমেই এটা সংগ্রহ করা হবে। সফটওয়্যার ও ডিজাইন বা পার্টস কিছু হয়তো বাইরে থেকে সংগ্রহ করবে কিন্তু সংযোজন করবে হয়তো বিএমটিএফ। তবে নিরাপত্তা ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত করবে বিএমটিএফের কারিগরি সহায়তা নিয়ে।