‘আধুনিক কর্মক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বিসিএস এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত
সি নিউজ ভয়েস ডেস্ক:বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ‘সাইবার সিকিউরিটি ইন মডার্ন ওয়ার্কপ্লেস’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে।
১৩ মার্চ (শনিবার) সন্ধ্যা ছয়টা ত্রিশ মিনিটে অনলাইনে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ। তিনি বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের কর্মক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। করোনাকালীন সময়ে আমাদের অনলাইনের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। অফিস, পড়াশোনা, ব্যবসা বাণিজ্য, চিকিৎসা থেকে শুরু করে এমন কোন খাত নেই যে খাতে ডিজিটাল শব্দ যুক্ত হয়নি। নিজের কর্মক্ষেত্রকে আমরা যেমন গুছিয়ে রাখি, অনলাইন অফিসের ক্ষেত্রেও সাইবার নিরাপত্তা এবং সুসজ্জিতকরণও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাইবার নিরাপত্তার বিষয়কে আমরা প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছি। তবে এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও নিজের অনলাইন কার্যক্রমের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমি বিসিএসকে আধুনিক কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ রাখার জন্য এমন কর্মশালা আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন চলমান থাকবে বলেই আমি আশাবাদী।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর। তিনি বলেন, মডার্ন ওয়ার্কপ্লেসের ধারণা অনেক আগে থেকেই চলে এসেছে। মানুষ প্রতিনিয়ত তার কর্মক্ষেত্রকে যুগোপযোগী করতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাসায় বসে অফিসের কাজ এমন ধারণা একসময় অমূলক থাকলেও গত দশকে আমরা এর আমূল পরিবর্তন দেখেছি। গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফটসহ যতো নামকরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা বহু আগে থেকেই বাসায় বসে কর্মীদের কাজের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। কাজকে সহজ করার জন্য ইন্টারনেটের জগতে অনেক অ্যাপস, সফটওয়্যার রয়েছে। এই সফটওয়্যার বা অ্যাপসগুলো ঠিকমতো ব্যবহার করতে না জানলে তা বিপদের কারণ হতে পারে। সাইবার নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক কর্মক্ষেত্রকে কিভাবে গতিশীল করা যায় সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে আমাদের এই আয়োজন। প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা এই প্রশিক্ষণে উপকৃত হবেন। ভবিষ্যতেও নিত্যনতুন বিষয়ে আমাদের কর্মশালা চলমান থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এর কো-অর্ডিনেটর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, বিসিএস সদস্যদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে নিজেদের কার্যক্রম চলমান রেখেছে। সাইবার নিরাপত্তা শুধু ব্যক্তিক্ষেত্রেই নয়, আধুনিক জীবনে কর্মক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এর পাশাপাশি অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক না করা, স্প্যাম মেসেজের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া, লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের কার্ডের তথ্য গোপন রাখা, অটিপি কারো সাথে শেয়ার না করার ব্যাপারেও গুরুত্বারোপ করা দরকার। উন্নত দেশের মতো আমরাও আমাদের কর্মক্ষেত্রকে আরো বেশি গতিশীল করতে সক্ষম হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ইন্টারনেটের ব্যবহারকে নিরাপদ করতে পারলে আরো বেশি মানুষ বা প্রতিষ্ঠান এই সেবা গ্রহণ করে নিজেদের কর্মপরিধি বৃদ্ধি করতে পারবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক মো. রেজাউল করিম এনডিসি বলেন, নিজের বাসা বা বিল্ডিং এর নিরাপত্তায় আমরা যেমন কয়েক স্তরের নিরাপত্তার কথা ভাবি তেমনি অনলাইন কর্মক্ষেত্রেও এধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরী। বিশেষ করে অনলাইনে ডাটা বা তথ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা ডিজিটাল তথ্য নিরাপদ রাখতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। বিসিএস এর সদস্যদের জন্যও আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এমন প্রশিক্ষণে সহায়তা প্রদান করতে পারি। নিজেরে নিরাপত্তার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রকেও নিরাপদ রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আধুনিক কর্মক্ষেত্র বিষয়টি যেমন নতুন, এর নিরাপত্তার বিষয়গুলোর সাথেও অনেকে অবগত নন। তাই এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তি প্রেমীরা প্রযুক্তির সঙ্গে সখ্যতার পাশাপাশি নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারবেন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন মাইক্রোসফট সাউথ এশিয়া এনএম এর সিওও জায়েদ আলকাদী এবং চিফ পার্টনার অফিসার এএনএইচ ফা। বিসিএস যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন এর সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিসিএস এর সহসভাপতি মো. জাবেদুর রহমান শাহীন, মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মো.কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক মোশারফ হোসেন সুমন এবং মো. রাশেদ আলী ভূঁঞা উপস্থিত ছিলেন।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করেন স্মার্ট টেকনোলোজিস বিডি লিমিটেডের সফটওয়্যার বিজনেস এর প্রধান মো. মিরসাদ হোসাইন। অনলাইনে প্রায় শতাধিক বিসিএস সদস্য এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি বিসিএস এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়। এসময় প্রায় ১ হাজার দর্শনার্থী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপভোগ করেন।
‘সাইবার সিকিউরিটি ইন মডার্ন ওয়ার্কপ্লেস’ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিয়ে মো. মিরসাদ হোসাইন বলেন, আমরা স্মার্টফোনের পাশাপাশি ল্যাপটপ, ট্যাব এমনকি স্মার্ট টিভি দিয়ে ইন্টারনেটে নিজেদের কাজ করে থাকি। এখনতো স্মার্ট ফ্রিজ বা এসিও চলে এসেছে। বাড়ির বাহিরে থেকেও এই ডিভাইসগুলোর উপর নিয়ন্ত্রন নেয়া যাচ্ছে। অনেকগুলো ডিভাইসকে যখন এক নেটওয়ার্কের কভারেজে রাখা হয়, তখন কাজের সুবিধার্তে বা টুল অথবা সফটওয়্যার ব্যবহার করে আমরা সবগুলো ডিভাইসকে একই সময়ে কাজে লাগাতে পারি। এখন সাইবার নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সিঙ্গেল ব্যবহারকারীর পাশাপাশি কর্পোরেটদের জন্যও সল্যিউশনের ব্যবস্থা করছে। আমরা সাইবার সিকিউরিটির টুলগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শিখে গেলে আমাদের নিরাপত্তা অনেকাংশেই নিশ্চিত হবে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অতিথি বক্তা মাইক্রোসফট বাংলাদেশের হেড অব চ্যানেল সেলস হোসেইন মাশরুর বলেন, করোনাকালীন সময়ে এসে আমরা বাসায় বসে অফিস করার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতিকে তরান্বিত করতে আমাদের নিরাপত্তার বিষয়কেও গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব অ্যাপ বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সেসব অ্যাপগুলো কেনার ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। মাইক্রোসফট বিসিএস এর এই আয়োজনে সহযোগী হতে পেরেছে বলে আমি আনন্দিত। সাইবার নিরাপত্তায় অরিজিনাল বা অথেনটিক সফটওয়্যার ব্যবহার করা জরুরী। এতে সাধারণ ব্যবহারের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের কার্যক্রমকেও নিরাপদ রাখা যায়।
আড়াই ঘণ্টার সেশনে তিনি ‘সাইবার সিকিউরিটি ইন মডার্ন ওয়ার্কপ্লেস’ সম্পর্কে দর্শনার্থীদের একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করেন। প্রশিক্ষন কর্মসুচী শেষে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিজয়ী হুয়াওয়ের স্মার্টওয়াচ এবং স্মার্টব্যান্ড উপহার পান। বিসিএস শাখা কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সদস্য প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদেরসহ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিসিএস যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন।
প্রসঙ্গত, আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি এবং মাইক্রোসফটের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির লাইভ স্ট্রিমিং সহযোগী টেকুজমডটটিভি।